আজকাল ওয়েবডেস্ক: শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের সঙ্গে টক্কর দিতে নামবে চার বছরের একটি ক্লাব। অল্পসময়ে ভারতীয় ফুটবলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার দৌড়ে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছে ডায়মন্ড হারবার এফসি। কলকাতা লিগ দিয়ে শুরু। তারপর আই লিগ টু থেকে আই লিগ। আসল লক্ষ্য আইএসএল। তবে তার আগে ডুরান্ড অভিষেকেই চমক কিবু ভিকুনার দলের। প্রথম বছরই ডুরান্ড সেমিফাইনালে। এবার ফাইনালে ওঠার চ্যালেঞ্জে অভিষেক ব্যানার্জির ক্লাবের কাঁটা ইস্টবেঙ্গল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মোহনবাগানের কাছে পাঁচ গোল হজম করে নক আউটে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টাটার মাঠে আইএসএলের দল জামশেদপুর এফসিকে হারিয়ে সেমিফাইনালে। এবার কিবুর দল ফাইনালের স্বপ্ন দেখছে। ক্লাবের ইতিহাস এবং দলগত শক্তিতে পিছিয়ে থাকলেও, কলকাতার প্রধানকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে তৈরি। মেনে নিলেন কলকাতার মাঠে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলা সবচেয়ে কঠিন। তবে পাশাপাশি জানিয়ে দেন, অসম্ভব বলে কিছু হয় না। ফুটবলে সবই সম্ভব।
কিবু বলেন, 'কলকাতায় মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলা সবচেয়ে কঠিন। সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েই মাঠে নামতে হবে। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আমাদের খেলায় কিছু ভুল হয়েছিল। দুটো গোল খাওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণের ভুল ছিল। তবে আমরা লড়াইয়ে ছিলাম। লাল কার্ড দেখার পর আমরা লড়াই থেকে ছিটকে যাই। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে নামার আগে মোহনবাগান ম্যাচের ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করি। জামশেদপুরের সমর্থকদের সামনেই আমরা জিতেছি। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সেই মানসিকতা নিয়েই নামতে হবে। মনে রাখতে হবে যে আমরাই একমাত্র দল যারা আইএসএলের দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলে এই জায়গায় পৌঁছেছি।'
জামশেদপুর ম্যাচের পর প্লেয়ারদের প্রশংসা করেন কিবু। সেদিন খেলার আগে এবং পরে দলের উদ্দেশে বলেন, 'তোমাদের ভাল খেলতে হবে। পাশাপাশি একটু ভাগ্যের সাহায্য লাগবে। আমরা আইএসএলের দলের বিরুদ্ধে খেলছি। তোমরা এদিন যা করেছ, এর থেকে বেশি কিছু দেওয়ার ছিল না। এখান থেকে খালি উন্নতি করা সম্ভব। প্রতিটা পদক্ষেপ উপভোগ করো।' ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নামার আগে সমস্যায় ডায়মন্ড হারবার। চোটের জন্য নেই ক্লেইটন সিলভেরা। বাকি বিদেশিদেরও চোট। মাত্র দু'জন বিদেশিকে পাবেন কিবু। তারমধ্যে রয়েছেন লুকা মাজেন এবং মিখেল কোরতাজার। মোহনবাগানের কাছে পাঁচ গোল খেয়েছেন। ইস্টবেঙ্গলকে হারানো সম্ভব? মিগুয়েল, মহেশ, বিপিনের প্রশংসা করেন ডায়মন্ড হারবারের কোচ। অস্কার ব্রুজোর দলকে সমীহ করলেও, নিজেদের সম্মান করার কথা জানালেন পোলিশ কোচ। দাবি, তাঁরা ভাল খেলেই এই জায়গায় পৌঁছেছি। উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরেন পোলিশ লিগের কথা।

কিবু বলেন, 'ফুটবলে সবকিছু সম্ভব। ইস্টবেঙ্গল শক্তিশালী দল। তবে আমরাও ভাল। আমরা নিজেদের শক্তি জানি। আমি ফুটবলে একাধিক দৃষ্টান্ত জানি যেখানে সবসময় সেরা দল জেতেনি। কাগজে কলমে পিছিয়ে থাকা দল জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। পোলিশ লিগে কোচিং করানোর সময় আমার জীবনে এমন ঘটনা ঘটে। এই খেলায় সবকিছুই সম্ভব। মানছি আমাদের থেকে ধারেভারে এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল। বিদেশি সহ ভারতীয় ফুটবলাররা ভাল। মিগুয়েল, সলের পাশাপাশি মহেশ, বিপিনরাও মোহনবাগান ম্যাচে ভাল খেলেছে। আমরাও ওদের মোকাবিলা করার জন্য তৈরি।'
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলে ফেলেছেন। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নামবেন। দুই দলকে কোন জায়গার রাখছেন প্রাক্তন সবুজ মেরুন কোচ? কিবু মনে করেন, কলকাতার দুই প্রধানের মধ্যে দূরত্ব কমছে। এই প্রসঙ্গে বলেন, 'মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল আই লিগেও শক্তিশালী ছিল। গত চার-পাঁচ বছরে মোহনবাগান সবকিছু জিতছে। ডার্বি হেরেছে বলে ওদের পিছিয়ে রাখা যাবে না। সবাই একসঙ্গে প্রাক মরশুম শুরু করেনি। ইস্টবেঙ্গল কয়েকদিন বেশি প্রস্তুতি নিয়েছে। তারওপর ওদের ছ'জন বিদেশি ছিল। সবসময় একটা দল জিততে পারে না। যারা ক্রমাগত হারছে, তাঁরা মাঝেমধ্যে তেতে গিয়ে সেরাটা দেয়। তবে বলতে পারি, দুই দলের মধ্যে পার্থক্য ক্রমশ কমছে।' আইএসএলে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের পাশাপাশি সমান শক্তিশালী দল হিসেবে নর্থ ইস্টের উল্লেখ করেন। একসময় তাঁর হাত ধরে মোহনবাগানে আই লিগ এসেছিল। ছ'বছর পর আবার মোহনবাগানিদের ভরসা কিবু। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ডুরান্ড থেকে ছিটকে দিতে তিনিই ভরসা। সবুজ মেরুন সমর্থকদের কি বলবেন তাঁর দলকে সাপোর্ট করতে? কিবু বলেন, 'আমি কোনও দলকে বা সমর্থকদের অনুরোধ করতে পারি না। আমি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সম্মান করি। আমরা ভাল ফুটবল খেলে জেতার চেষ্টা করব।' কিবু এই প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ আঁটলেও, বুধ সন্ধেয় অলিখিতভাবে বাগান সমর্থকদের পাশে পাবেন প্রাক্তন সবুজ মেরুন কোচ।
