আজকাল ওয়েবডেস্ক: আশ্চর্য কাণ্ড ঘটালেন অভিভাবক। দিল্লির এক দম্পতি তাঁদের নিজেরই মেয়ের উপর গোয়েন্দা নিযুক্ত করার ঘটনায় আলোচনার শিখরে এসছেন। একটি ভিডিও ঘিরে সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, তানিয়া পুরী নামক এক প্রাইভেট গোয়েন্দা ব্যাখ্যা করছেন কীভাবে এক দম্পতি তাঁদের নিজের মেয়েকে সন্দেহ করেছিলেন যে তিনি গোপনে কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এমনকি সেই সন্দেহ দূর করতে তাঁরা গোয়েন্দা পর্যন্ত নিযুক্ত করেন।
একটি বিশেষ পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে তানিয়া জানিয়েছেন, যুবতী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। কয়েকদিন তাঁর গতিবিধি নজরদারির পরও কোনও অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর তিনি জানান ওই যুবতী এরপর একদিন গিটিবি নগর এলাকায় যান। ওই এলাকা মূলত দেহব্যবসার জন্য কুখ্যাত। সেখানে গিয়ে যুবতীকে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। খবর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি বাড়তি টাকার জন্য এমন জায়গায় যেতেন, যাতে দামি জামাকাপড় কেনা ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় যথাযথ খরচ করতে পারেন।
এই ঘটনাটি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই প্রসঙ্গে নিয়ে আসেন স্বামী অনিরুদ্ধাচার্যের সাম্প্রতিক মন্তব্য, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ২৫ বছরের ওপরে মেয়েদের 'নৈতিকতা শিথিল' হয়ে যায়। তিনি আরও দাবি করেন, মেয়েদের ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে দেওয়া উচিৎ যাতে তাঁরা স্বামীর পরিবারে সহজে মানিয়ে নিতে পারে। অনিরুদ্ধাচার্যের এই মন্তব্য অনেকেই সমর্থন করে পোস্ট করেন, 'অনিরুদ্ধাচার্যজি ঠিকই বলেছিলেন', যদিও অধিকাংশ ব্যবহারকারী একে অপমানজনক ও অমানবিক বলে সমালোচনা করেন।
ঘটনার জেরে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন তোলেন, মেয়ের প্রেম নিয়ে সন্দেহ করলেও কেন বাবা-মা সরাসরি কথা না বলে তাঁর ওপর নজরদারি চালালেন। একজন মন্তব্য করেন, 'মেয়ের জন্য টাকা নেই, কিন্তু গোয়েন্দা নিয়োগে সমস্যা নেই, কি বিচিত্র!' আরেকজন আবার লিখেছেন, 'এত রক্ষণশীল পরিবার প্রেম মানে না, অথচ মেয়েকে বিলাসবহুল জীবনযাপনের মতো খরচও দেয় না, কিন্তু গোয়েন্দা রাখার খরচ দেয়-বেশ কৌতূহলজনক।'
আরেকজন ব্যাঙ্গ করে লেখেন, 'এটা কি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন নয়? কাউকে তাঁর অজান্তে অনুসরণ করা কি আইনসঙ্গত?' কেউ কেউ বলেন, বাবা-মায়ের উচিৎ সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা, সন্দেহ হলে সরাসরি আলোচনা করা। অনেকেই ঘটনা ঘিরে দম্পতির তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা স্বামী অনিরুদ্ধাচার্য পরবর্তীতে দাবি করেন যে, তাঁর বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে তিনি একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে ঘটনার বিষয় বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সাহায্যে ভিডিওটি পরিবর্তন করে অন্যরকম বিভ্রান্তিকর মন্তব্য বসিয়ে তা প্রচার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ সাংসারিক কলহ মূল কারণ? তিন সন্তান নিয়ে মায়ের চরম পদক্ষেপ, উত্তর প্রদেশে হাড়হিম কাণ্ড ...
বর্তমানে এই ঘটনা ঘিরে নেটপাড়া উত্তাল। অনেকের দাবি এর জেরে ওই অভিভাবক দম্পতিকে জেরা করা হোক। তাঁদের এমন আচরণের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।
সহজে ও দ্রুত অর্থ উপার্জনের নেশা বহু তরুণ-তরুণীকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। চাকরি বা পড়াশোনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি পরিশ্রমের পরিবর্তে অনেকে ঝুঁকছে শর্টকাট পথে, যা অনেক সময় বেআইনি বা নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। দামি পোশাক, বিলাসবহুল জীবনযাপন, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দেখানোর প্রবণতা—সব মিলিয়ে একধরনের ভোগবাদী মানসিকতা তৈরি হচ্ছে, যেখানে অর্থ উপার্জনের উৎস নিয়ে তেমন ভাবনা থাকে না। এর ফলে কেউ জড়িয়ে পড়ছে প্রতারণা, অবৈধ ব্যবসা কিংবা দেহব্যবসায়। প্রাথমিকভাবে এই পথে দ্রুত টাকা মিললেও দীর্ঘমেয়াদে তা বিপর্যয় ডেকে আনে—আইনগত শাস্তি, সামাজিক অসম্মান, এমনকি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি। সমাজে সচেতনতা, পারিবারিক সংলাপ ও আর্থিক শিক্ষার অভাব এই প্রবণতা বাড়াচ্ছে। টেকসই ও সৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন যে শুধু নিরাপদ নয়, জীবনের স্থায়ী সুখের ভিত্তি—এ কথা তরুণ প্রজন্মকে জানানো এখন সময়ের দাবি।
