আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্ত্রীর বিলাসবহুল জীবনের চাহিদা মেটাতে না পেরে চাকরি ছেড়ে ছিনতাইয়ের পথ বেছে নিলেন এক BBA ডিগ্রিধারী যুবক। গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তের নাম তরুণ পারেক। তিনি রাজস্থানের জাম্বরামগড় গ্রামের বাসিন্দা। বিয়ের এক মাসের মধ্যেই পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, বিয়ের পর স্ত্রী নিয়মিতভাবে দামি জিনিসপত্র ও অতিরিক্ত খরচের দাবি করছিলেন। স্ত্রীর এই চাপ সামলাতে না পেরে একটি বেসরকারি সংস্থার এক্সিকিউটিভ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে অপরাধের জগতে প্রবেশ করেন তরুণ।
সম্প্রতি জয়পুরের ট্রান্সপোর্ট নগর এলাকায় এক প্রবীণ মহিলার গলার সোনার হার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ তরুণের গতিবিধি শনাক্ত করে এবং অবশেষে শুক্রবার তাকে গ্রেফতার করে। জানা গিয়েছে, তরুণ প্রতিটি অপরাধ পরিকল্পনা করে করতেন যাতে সন্দেহের বাইরে থাকা যায়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, তিনি নিয়মিত গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে যাতায়াত করে অপরাধ করতেন।
পুলিশ এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, সে একা ছিল নাকি তার সঙ্গে আর কেউ ছিল। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, তরুণের স্ত্রী কি এই অপরাধে কোনওভাবে জড়িত ছিলেন কি না। এই ঘটনায় সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে মত বিশ্লেষকদের। লোভ ও সামাজিক অবক্ষয় আমাদের সমাজের এক গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। ব্যক্তি যখন নিজের সামর্থ্যের সীমা অতিক্রম করে কৃত্রিম চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে, তখনই নৈতিকতা ভেঙে পড়ে।
আরও পড়ুন: "ভারতের নাগরিকরা গোটা দেশের অধিকার রাখে, শুধু আঞ্চলিক নয়": শান্তিনিকেতনে গর্জে উঠলেন অমর্ত্য সেন
আধুনিক ভোগবাদী সংস্কৃতি মানুষকে শিক্ষা দেয়, সুখ মানেই বিলাসিতা, অর্থ আর বাহ্যিক চাকচিক্য। এই ধারণা শুধু ব্যক্তিকে নয়, গোটা সমাজকে একটি প্রতিযোগিতার খেলায় নামিয়ে দিয়েছে—যেখানে যার আছে সে আরো পেতে চায়, আর যার নেই সে পেতে চায় যেকোনো উপায়ে। এই লোভ যখন চাপ সৃষ্টি করে, তখন মানুষ নিজের মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে অপরাধের পথ বেছে নেয়। কখনও তা হয় ব্যক্তিগত সম্পর্কের চাপ থেকে, যেমন স্ত্রীর চাহিদা মেটাতে স্বামীর ছিনতাইয়ে নামা। আবার কখনও তা হয় সামাজিক স্বীকৃতির মোহে।
অপরাধকে যদি শুধুই আইনভঙ্গ বলে দেখি, তাহলে এর শিকড় পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব নয়। এর পেছনে থাকে ন্যায্যতা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা, আত্মসম্মান রক্ষার ভুল মানসিকতা, কিংবা সমাজের চাপ। কাজেই, লোভ এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে চাই শিক্ষা, সহানুভূতি ও একটি মূল্যনির্ভর সামাজিক কাঠামো—যেখানে মানুষকে তার মানবিকতা দিয়ে বিচার করা হয়, অর্জিত সম্পদ দিয়ে নয়।
