আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। মালেগাঁওয়ের ভিক্ষু চকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। প্রাণ গিয়েছিল ছ' জনের। আহত হন বহু। মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন ভোপালের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিত। সতেরো বছর পর ওই মামলায়  রায় ঘোষণা হল বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই। এনআইএ বিশেষ আদালত, ওই মামলায় সাধ্বী প্রজ্ঞা-সহ সাতজনকেই বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে। 

 

২০০৮-এর বিস্ফোরণের ঘটনার পর, মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখা মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছিল সাধ্বী প্রজ্ঞা এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিতকে। অভিযোগ ছিল, মসজিদের পাশে থাকা  যে মোটরবাইক বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছিল, পরিকল্পনা করেই দুটি বোমা মজুত রাখা হয়েছিল তাতে, তা সাধ্বীর নামেই ছিল। প্রসাদ পুরোহিত সাধ্বীকে গোটা ঘটনায় সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। 

 

আরও পড়ুন: বিস্ফোরক! হঠাৎ দ্রুত ঘুরতে শুরু করেছে পৃথিবী, ছোট হচ্ছে দিন! সর্বনাশের ইঙ্গিত দিলেন বিজ্ঞানীরা?

 

এর আগে, এপ্রিল মাসে জানা যায়,  ২০০৮ সালের মালেগাঁও বোমা বিস্ফোরণ মামলায় সাত অভিযুক্তের সকলের বিরুদ্ধেই বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (ইউএপিএ) ধারা ১৬-এর অধীনে মৃত্যুদণ্ড-সহ সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের জন্য মুম্বইয়ের একটি বিশেষ আদালতের কাছে আবেদন জানায় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। এপ্রিল মাসে,  মামলা সংক্রান্ত প্রায় ১৪০০ পাতার বিস্তারিত রিপোর্ট জমা পড়ে বিশেষ এনআইএ আদালতে। এর আগে এনআইএ পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে এই মামলা থেকে অব্যহতি দিয়েছিল। তদন্ত চলাকালীন ৩২৩ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছিল। পরে ৩৪ জন নিজেদের বয়ান পাল্টে ফেলেন বলেও জানা যায়।

সাধ্বী এবং প্রসাদ পুরোহিত ছাড়াও এই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন, সুধাকর দিবেদী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর রমেশ উপাধ্যায়, অজয় ​​রাহিরকর, সুধাকর চতুর্বেদী এবং সমীর কুলকার্নি।সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার আদালত জানিয়েছে, কেবল সন্দেহের বশে এই ধরনের এক মামলা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। একইসঙ্গে বৃহস্পতিবার আদালত জানিয়েছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল যে প্রজ্ঞার, তা প্রমাণিত হয়নি ফরেন্সিক পরীক্ষায়। 

 

২০১১ সালে মামলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে। এনআইএ যখন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল, তখন অভিযুক্তরা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা এটিএস-এর অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন। ২০১৬ সালে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে এনআইএ। সেই চার্জশিট থেকে এটিএস-এর আনা ধারাটিকে বাদ দেওয়া হয়। এনআইএ বলেছে যে এটিএস যেভাবে সংগঠিত অপরাধ আইন প্রয়োগ করেছে তা প্রশ্নাতীত নয়। এনআইএ চার্জশিটে আরও দাবি করে যে, প্রজ্ঞা ঠাকুরের বিরুদ্ধে যে সকল প্রমাণ জোগাড় করা হয়েছিল সেখানে অনেক ফাকফোঁকর ছিল এবং মাত্র সাত জনের বিরুদ্ধেই প্রমাণ মিলেছে, ১১ জনের বিরুদ্ধে নয়। তদন্তকারী সংস্থা আরও জানায় বাইকটি প্রজ্ঞার নামে নথিভুক্ত করা থাকলেও সেটি কালসাংরার জিম্মায় ছিল এবং বিস্ফোরণের আগে বাইকটি তিনিই ব্যবহার করেছিলেন।

এনআইএ আরও দাবি করেছিল যে, এটিএসের মামলাটি স্বীকারোক্তির উপর নির্ভর করে খাঁড়া করেছিল। যা আদালতে প্রমাণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য ছিল। তবে এটিএস তাড়াহুড়ো করে সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগ করেছিল।

 

সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনআইএ তাদের চূড়ান্ত বক্তব্যে জানিয়েছিল যে মালেগাঁও বিস্ফোরণটি ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি অংশকে আতঙ্কিত করার, প্রয়োজনীয় পরিষেবা ব্যাহত করার, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করা এবং রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিঘ্নিত করার জন্য সংঘটিত হয়েছিল।