মেকআপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল লিপস্টিক। পোশাকের সঙ্গে মানানসই শেডের লিপস্টিক সাজের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের লিপস্টিক পাওয়া যায়। ম্যাট শেড, ন্যুড সেড থেকে লিকুইড লিপস্টিক, ক্রেয়ন এবং আরও অনেক ধরনের লিপস্টিকের চল রয়েছে। কিন্তু যে ধরনের লিপস্টিকেই ঠোঁট রাঙিয়ে তুলুন না কেন, তাতে যে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। জানেন কি এই সব রাসায়নিক আপনার স্বাস্থ্যের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকী আপনার কিডনি, ফুসফুস সহ আরও জটিল শারীরিক সমস্যার নেপথ্যে থাকতে পারে লিপস্টিক।
সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে, সমস্ত ব্র্যান্ড ও রঙের লিপস্টিকে ক্যাডমিয়াম থাকে। যা থেকেই কিডনি ও ফুসফুস সমস্যা, হাড়ের দুর্বলতা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, নার্ভাস সিস্টেম নষ্ট হয়ে যাওয়া এমনকী ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। আসলে ঠোঁট থেকে লিপস্টিক বা লিপ বাম লালায় মিশে পেটেও যায়। আর তখনই এই রাসায়নিক বিষক্রিয়ার কাজ করে।
আরও পড়ুনঃ খাবারে বেশি নুন দেন? জানেন দীর্ঘদিনের এই অভ্যাস শরীরের কোন মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে?
কিছু নির্দিষ্ট প্রোডাক্টে রঙের রঙ্গক বিশেষ করে হলুদ, কমলা শেডে ক্যাডমিয়াম ব্যবহার করা হয়। সেই ক্যাডমিয়ামই সমস্ত লিপস্টিক ব্র্যান্ডে পরিমাপযোগ্য পরিমাণে পাওয়া গেছে। কিছু লিপস্টিকে মানুষের জন্য সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ক্যাডমিয়াম রয়েছে। এমনকী বেশিরভাগ নমুনায় ক্যাডমিয়ামের ঘনত্ব এফডিএ-এর গ্রহণযোগ্য সীমা প্রতি কেজিতে ৩ মিলিগ্রামের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, এমন প্রমাণও গবেষণা দেখা গিয়েছে।
গবেষকদের মতে, দীর্ঘদিন লিপস্টিক ব্যবহারের ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ক্যাডমিয়াম জমা হতে থাকে। যা কিডনির ক্ষতি, ফুসফুসের ক্ষতি, হাড়ের ব্যাধি, হরমোনের ভারমাস্য নষ্ট করতে পারে। এমনকী ক্যাডমিয়ামকে মানুষের কার্সিনোজেন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাই এই ক্যানসারের মতো মারণ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে লিপস্টিক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লিপস্টিক বা লিপ বাম কোনওটিই ঠোঁটের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। এগুলিতে এমন রাসায়নিক ও কৃত্রিম রঙের ব্যবহার হয়, যা ত্বক সহ সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। বিভিন্ন শেডের লিপস্টিকে যে সিন্থেটিক রঙের ব্যবহার হয়, তা পেট্রোলিয়াম জাত পণ্য থেকে আসে। আরও যে রাসায়নিক থাকে লিপস্টিক ও লিপ বামে, তার মধ্যে একটি হল গ্লাইকল প্রপিলিন। রং ও গন্ধের জন্য এই তরল কম মাত্রায় প্রয়োগ হলে তেমন ক্ষতি নেই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, লিপস্টিককে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এর প্রয়োগ বেশি মাত্রায় হয়।
আবার প্যারাবেনের মতো রাসায়নিকও থাকে লিপস্টিক ও লিপ বামে। প্যারাবেন শরীরে গেলে তা ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। স্তনের ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। আরও এক রাসায়নিক থাকে, যা হল স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। ঠোঁট নরম রাখার জন্য এই উপাদানটি মেশানো হয়, কিন্তু এটির কারণে ত্বকের কোষের ক্ষতি হতে পারে। তাই লিপস্টিক বা বাম কেনার আগে অবশ্যই লেবেল পরীক্ষা করে নিন। যতটা সম্ভব রাসায়নিকমুক্ত লিপস্টিক বা লিপ বাম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
