আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিদেশে বসবাসকারী বহু ভারতীয় কেন দেশের প্রতি টান থাকা সত্ত্বেও দেশে ফিরে আসতে আগ্রহী নন- এই প্রশ্ন ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ স্বপ্নিল কোম্মাওয়ার। সম্প্রতি এক্স-এ করা তাঁর একটি পোস্ট বিপুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
স্বপ্নিল কোম্মাওয়ার, যিনি 'Rich Trader Poor Trader' বইয়ের লেখক, তাঁর পোস্টে জানান, কানাডায় বসবাসকারী এক বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এই উপলব্ধিতে পৌঁছেছেন। ওই বন্ধু তাঁকে খুব সোজাসাপটা ভাষায় জানান ৫-৬ কোটি টাকা সঞ্চয় করার পরও বহু মানুষ ভারতে ফিরে আসতে চান না। কারণ, তাঁদের মতে, বিদেশে জীবন অনেকটাই “সহজ”।
স্বপ্নিল লেখেন, “ও বলেছিল, ব্যাপারটা এমন নয় যে তারা ভারতকে ঘৃণা করে। বরং বাস্তব জীবনে বিদেশে থাকা তুলনামূলকভাবে কম ক্লান্তিকর।” তাঁর বন্ধুর বক্তব্য অনুযায়ী, উন্নত কাজের পরিবেশ, পরিষ্কার ও স্বচ্ছ নিয়মকানুন, ওভারটাইম কাজ করলে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক, তুলনামূলক কম দুর্নীতি, এসব বিষয়ই বিদেশের জীবনকে সহজ করে তোলে।
পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ভারতে দৈনন্দিন জীবনে দূষণ, যানজট, প্রশাসনিক জটিলতা এবং নিত্যদিনের মানসিক চাপ মানুষকে ক্রমাগত ক্লান্ত করে তোলে। “টাকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ,” স্বপ্নিল লেখেন, “কিন্তু তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক শান্তি, কর্মক্ষেত্রে সম্মান এবং একটি কার্যকর ব্যবস্থা।”
তিনি আরও স্পষ্ট করেন, তাঁর বন্ধু আবেগগতভাবে এখনও ভারতকে ভালোবাসেন। তবে বাস্তবতার নিরিখে বিদেশের জীবন তাঁর কাছে বেশি নিরাপদ ও স্থিতিশীল বলে মনে হয়। এই বক্তব্যে কোনও রকম বিচার বা মূল্যায়ন নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, প্রত্যেক মানুষের জীবনে অগ্রাধিকারের জায়গা আলাদা।
এই পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পোস্টটি প্রায় ২ লক্ষ ৭৯ হাজারের বেশি ভিউ পেয়েছে, লাইক পড়েছে ৩ হাজারেরও বেশি এবং ২০০-র বেশি কমেন্ট হয়েছে পোস্টটিতে।
কমেন্ট সেকশনে নানা অভিজ্ঞতা ও মতামত উঠে এসেছে। এক ব্যবহারকারী লেখেন, “অনেক এনআরআই এখন বছরে একবারও ভারতে আসেন না, কারণ রাস্তাঘাটে বা এমনকি আত্মীয়দের হাতেও প্রতারণার শিকার হওয়ার ভয় থাকে।”
আরেকজন লেখেন, “ভারতে শ্রমিক স্তরে শোষণ ভয়াবহ। মহিলাদের ক্ষেত্রে তা অনেক সময় যৌন নির্যাতনের আকারও নেয়। ওভারটাইম চাইলে ঠিকাদার মারধর পর্যন্ত করে। কোম্পানি টাকা দিলেও মাঝখান থেকে ঠিকাদাররা কেটে নেয়।”
তবে সব মন্তব্যই যে বিদেশজীবনের প্রশংসায় ভরা, তা নয়। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কানাডা ভারতীয়দের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য হলেও সবার অভিজ্ঞতা এক নয়। বিনামূল্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেখানে দীর্ঘ অপেক্ষা ও জটিলতার মুখে পড়তে হয়।”
সব মিলিয়ে, স্বপ্নিল কোম্মাওয়ারের পোস্ট নতুন করে সামনে এনেছে প্রবাসী ভারতীয়দের মানসিক টানাপোড়েন দেশের প্রতি আবেগ বনাম জীবনের বাস্তব সুবিধা। এই বিতর্ক আবারও প্রশ্ন তুলছে, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, জীবনযাত্রার মান, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক নিরাপত্তাই কি মানুষকে দেশে ফেরাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেয়?
