আজকাল ওয়েবডেস্ক: “সবচেয়ে পছন্দের দেশ” হিসেবে দুবাইতে আবার ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক জর্ডান হাউম্যান। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার আগেই তাঁকে আটক, জিজ্ঞাসাবাদ ও শেষমেশ দেশছাড়া হতে হয় শুধুমাত্র তাঁর মুখভর্তি ট্যাটুর কারণে। ৩৪ বছর বয়সী জর্ডান তাঁর মেয়ে কাইসি ও সঙ্গিনী থেরেসাকে নিয়ে ১১ জুন দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। আগেও দু'বার তিনি আমিরাতে এসেছিলেন এবং কোনো সমস্যায় পড়েননি। এবার তিনি ই-গেট ব্যবহার করে প্রবেশ করতে চাইলেও তাঁকে আটকে দেয় বিমানবন্দরের কর্মীরা।
পরবর্তীতে তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই একটি ঘরে বসিয়ে রাখা হয়। অন্যদিকে, তাঁর পরিবার পাঁচতারা হোটেলে পৌঁছে গেলেও হাউম্যান বিমানবন্দরেই বন্দি থাকেন। থেরেসা তাঁকে দেখতে ফিরে এলে নিরাপত্তার অজুহাতে তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। জর্ডানের অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত এক মহিলা অফিসার তাঁকে সাফ জানান, "তোমাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, কারণ তোমার মুখভর্তি ট্যাটু। এই চেহারার কারণে তোমাকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।” কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই তাঁকে ফিরতি বিমানে তুলে দেওয়া হয়।
যদিও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ট্যাটু নিষিদ্ধ নয়, তবে ইসলামি সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে শরীরচর্চার কিছু রীতিকে অপছন্দ করা হয়। অনেক মুসলিম পণ্ডিত ট্যাটুকে শরীর বিকৃতির সঙ্গে তুলনা করে হারাম বলে বিবেচনা করেন। বিশেষ করে মুখে ট্যাটু হলে তা অপরাধী বা গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয়, যা সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও দেশের ভিসা বা প্রবেশ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত তাদের সার্বভৌম অধিকার, তবুও এর মধ্যে বৈষম্য, পক্ষপাত ও অস্বচ্ছতা স্পষ্ট। বার্মিংহামের ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফিওনা ডি লনড্রাস বলেন, “আইনসম্মত কিছু হলেও তা সবসময় ন্যায্য হয় না। বিশেষ করে যখন সিদ্ধান্তের কোনও জবাবদিহিতা থাকে না।”
জর্ডান হাউম্যানের অভিজ্ঞতা কেবল ব্যক্তিগত লাঞ্ছনা নয়, বরং একটি বৃহত্তর বাস্তবতার প্রতিফলন যেখানে আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতি প্রায়শই সংঘর্ষে জড়ায়। তাঁর ট্যাটুতে লেখা ছিল “Blessed”, “Crazy Life”, ও “Family”—কোনোটিই আপত্তিকর নয়। তবুও শুধু বাহ্যিক রূপের ভিত্তিতে তাঁকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে যেখানে বৈচিত্র্য ও নিজস্বতা উদযাপনের কথা বলা হয়, সেখানে আন্তর্জাতিক যাত্রার বাস্তবতা এখনো বৈষম্যমূলক আচরণে ভরা। জর্ডানের মতো বহু পর্যটক ট্যাটু, চুলের রং বা পোশাকের কারণে বিমানবন্দরে থমকে যাচ্ছেন—আইন না ভাঙলেও অপরাধীর মতো আচরণ পাচ্ছেন।
জর্ডানের ভাষায়, “শুধু আমার চেহারার কারণে আমাকে অপরাধীর মতো করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এটা অপমানজনক।” এই ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দেয়, ভিসা বা পাসপোর্ট যতই বৈধ হোক না কেন, অনেক সময় প্রবেশাধিকারের সিদ্ধান্ত গোপন সামাজিক নিয়ম ও সংস্কৃতির বিচারে নির্ধারিত হয়। বিশ্বযাত্রার পথে হয়তো দরজা খোলা, কিন্তু মনগুলো এখনো পুরোপুরি খোলা হয়নি।
