জুলাই আন্দোলনের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের জ্বলছে বাংলাদেশ। ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশের আগামী ইলেকশনের ঢাকার বিজয়নগর এলাকার স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে 'সোনার' বাংলা। শেখ মুজিবর রহমানের ধানমন্ডির বাড়ি সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। বাদ যায়নি ছায়ানট। এই ঘটনার পর প্রতিবাদে সরব হলেন গায়ক সায়ন অর্ণব চৌধুরী ওরফে অর্ণব।
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর সকাল থেকেই ছায়ানট ভাঙচুরের একাধিক ছবি, ভিডিও সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল। কোনও ছবিতে দেখা যাচ্ছে তানপুরা ভেঙে দু' টুকরো হয়ে পড়ে, কোথাও ভেঙে ফেলা কার্পেটের উপর পড়ে রয়েছে হারমোনিয়াম। পুড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে গীতবিতান, অন্যান্য বই সহ নথিপত্র। বাদ যায়নি অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র সহ চেয়ার টেবিল। তঞ্জির রহমান সৌমিক নামক এক ব্যক্তি তছনছ হওয়া ছায়ানটের ছবি পোস্ট করলে সেটাই শেয়ার করেন অর্ণব। একই সঙ্গে ক্যাপশনে প্রকাশ করে এই তাণ্ডবলীলা কী করে দমন করা যায় বা যেতে পারে তার বিকল্প পথ।
সায়ন অর্ণব চৌধুরী এদিন ইংরেজিতে ক্যাপশনে যা লিখেছেন তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, 'আমাদের সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে হবে, ভোট দিতে হবে। নইলে আমরা, সংগীতশিল্পীরা বিপদে পড়ব। দেখুন ওরা ছায়ানটের কী হাল বানিয়েছে।' তিনি এদিন তাঁর এই পোস্টে আরও লেখেন, 'আমরা একমাত্র যেভাবে লড়াই করতে পারি সেটা হল ভোট দিয়ে, এবং বাকিদের এই একই কাজ (ভোট দিতে) করতে উৎসাহ দিতে।' অর্ণবের এই পোস্টে অনেকেই তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে তৈরি করা হয় ছায়ানট। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল সংস্কৃতি এবং সঙ্গীতের চর্চা জারি রাখা এবং প্রচার করার জন্য। যখন পাকিস্তানি সৈন্যদের তরফে বাংলাদেশে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন তার বিরোধিতা করে জনপ্রিয়, কালজয়ী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী কালিম শারাফি অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে ছায়ানট তৈরি করেন। ফলে, এটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান তো বটেই, একই সঙ্গে হেরিটেজও বটে। প্রায় ৬৪ বছর ওসমান হাদির মৃত্যুর ক্ষোভ, রোষে এই জায়গাকে রীতিমত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছেন তাঁর অনুরাগীরা।
'ভারত বিরোধী' তথা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম 'মুখ' শরিফ ওসমান হাদিকে গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবক গুলি করেন। এরপর তাঁকে তড়িঘড়ি ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে, উন্নত চিকিৎসার জন্য হাদিকে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয় ইউনূস সরকার। সেখানেই গত ১৮ ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন হাদি। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। তাঁর অনুরাগীরা জায়গায় জায়গায় ভাঙচুর, বিক্ষোভ চালায়। প্রকাশ্যে পুড়িয়ে দেয় হিন্দু যুবককে।
