আজকাল ওয়েবডেস্ক: তীব্র মতবিরোধ এবং পারস্পরিক সন্দেহের আবহে কংগ্রেস নেতা তথা তিরুভনন্তপুরমের সাংসদ শশী থারুরের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিলেন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা কে মুরলীধরন। রবিবার (২১ জুলাই) তিনি ঘোষণা করেন, শশী থারুর যতদিন না তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত অবস্থান বদলাচ্ছেন, ততদিন তাঁকে থিরুভনন্তপুরমে কোনো কংগ্রেস কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

মুরলীধরনের এই মন্তব্য কার্যত থারুরকে "আমাদের দলের লোক" না বলেই চিহ্নিত করে দেয়। তিনি বলেন, "থারুর আমাদের সঙ্গে নেই। সুতরাং তাঁকে বয়কট করার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন।" তিনি আরও জানান, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই ঠিক করবে থারুরের বিরুদ্ধে কী ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, কংগ্রেস এবং আইএনডিআইএ জোটের অন্যান্য দলগুলি যেখানে জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সাম্প্রতিক জঙ্গি হানার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ব্যর্থতার অভিযোগে সোচ্চার, সেখানে থারুর উল্টো সুরে কথা বলে দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেন। সম্প্রতি কোচিতে এক অনুষ্ঠানে থারুর বলেন, "দেশের স্বার্থ আগে। রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মঙ্গল করার জন্যই থাকা উচিত।" তিনি জানান, সশস্ত্র বাহিনী ও কেন্দ্র সরকারকে কিছু বিষয়ে সমর্থন করায় তাঁকে অনেকেই "দলবিরোধী" বলছেন, কিন্তু তিনি নিজের অবস্থানে অটল থাকবেন।

আরও পড়ুন: কানওয়ার যাত্রায় গুণ্ডামির অভিযোগে উত্তপ্ত উত্তরপ্রদেশ— দোষীদের জেলে পাঠানোর দাবি সমাজবাদী বিধায়কের, যোগীর পাল্টা সমর্থন

তিনি আরও অভিযোগ করেন, "যখন কেউ জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অন্য দলের সঙ্গে সহযোগিতার ডাক দেন, তখন তাঁর নিজের দলই তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। এটাই বড় সমস্যা।" কে মুরলীধরন অতীতে থারুরকে নিয়ে একাধিকবার কটাক্ষ করেছিলেন। সম্প্রতি এক জরিপে থারুরকে ইউডিএফ-এর মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হলে তিনি কটাক্ষ করে বলেন, "প্রথমে ওঁর ঠিক করা উচিত, উনি কোন দলে আছেন।" এছাড়া, থারুর যখন মালয়ালম সংবাদপত্রে একটি প্রবন্ধে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন, তখনও মুরলীধরন তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান এবং বলেন, একজন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে থারুরের এই ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

এই মুহূর্তে থারুরের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব ঘনীভূত হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেরলের রাজনীতিতে আগামীদিনে এই মতানৈক্য বড় ধরনের বিভাজনের ইঙ্গিত দিতে পারে। একদিকে থারুর জাতীয় স্তরে নিজেকে ‘নির্বাচযোগ্য মুখ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন, অন্যদিকে রাজ্য কংগ্রেস তাঁর এই "স্বতন্ত্র রাজনীতি"কে সহ্য করতে পারছে না। এখন দেখার, কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী সিদ্ধান্ত নেয় — শশী থারুরকে ফের দলে সম্পৃক্ত করতে চায়, না কি তাঁকে আলাদা পথে যেতে উৎসাহিত করে। যে কোনো সিদ্ধান্তই কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কেরল রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে।

শশী থারুর ও কংগ্রেসের মধ্যে দূরত্ব দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর থারুরের 'জাতীয় স্বার্থ আগে' মন্তব্য এবং কেন্দ্র সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সমর্থন কংগ্রেসের ভেতরে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কে মুরলীধরন জানিয়ে দেন, থারুর যতদিন তাঁর অবস্থান না বদলান, ততদিন তাঁকে কোনও কংগ্রেস কর্মসূচিতেই আমন্ত্রণ জানানো হবে না। থারুরের মন্তব্যকে দলের প্রতি অসদ্ভাবনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। একদিকে তিনি জাতীয় স্বার্থে ‘সহযোগিতা’র কথা বললেও, রাজ্য কংগ্রেস তাঁকে দলত্যাগী বলেই মনে করছে। ফলে থারুর ক্রমশ কংগ্রেসের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন।