আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডজুড়ে চলমান বার্ষিক কানওয়ার যাত্রা ঘিরে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা ও বিতর্ক। বিভিন্ন জেলায় একাধিক সহিংসতা, ভাঙচুর, হুমকি ও নিগ্রহের ঘটনার জেরে সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসন উদ্বিগ্ন। এর মধ্যেই সামভাল থেকে সমাজবাদী পার্টির প্রবীণ বিধায়ক ইকবাল মাহমুদ এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেন, “আজকের দিনে কানওয়ার যাত্রায় শিবভক্ত কম, গুণ্ডা বেশি। যারা হাঙ্গামা করছে, তাদের জায়গা জেলে।”
হামলা ও হাঙ্গামার সাম্প্রতিক চিত্র
মেরঠে একটি স্কুলবাস কানওয়ারিদের একটি মিছিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছুজনের গায়ে সামান্য ধাক্কা লাগে। এরপর রাস্তায় থাকা কানওয়ারিরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাস থামিয়ে চালককে মারধর করে ও জানালার কাচ ভাঙে। ভিডিও ভাইরাল হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। লখনউয়ের কাছের ফৈজাবাদ রোডে একটি ধাবায় শুধুমাত্র হিন্দু নাম না থাকার কারণে এক দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সেই ধাবার কর্মীদের মারধর করা হয় এবং দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়।
আরও পড়ুন: ২০০৬ মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ: ১৯ বছর পর ১২ জন অভিযুক্তকে মুক্তি দিল বম্বে হাইকোর্ট
মির্জাপুর রেলস্টেশনে এক দল কানওয়ারি সিআরপিএফ জওয়ানকে ঘিরে ধরে। অভিযোগ, ট্রেনের টিকিট নিয়ে বচসা চলাকালীন তাকে ঘুষি, লাথি মারতে থাকে ওই যাত্রীরা। এই ঘটনায় সাতজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। হারদুই জেলায় এক বেসরকারি ক্লিনিকের সামনে যাত্রীদের উচ্চস্বরে গান বাজানো ও বাইকে হর্ন বাজানো নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি তুললে সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ইকবাল মাহমুদের বক্তব্য
সমাজবাদী বিধায়ক ইকবাল মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, “যাত্রার নামে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। প্রশাসন যদি এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এদের কোনও ধর্মীয় অধিকার নেই, এরা ভণ্ড। সত্যিকারের শিবভক্ত এমন অরাজকতা করতে পারেন না।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের কার্যকলাপ ঈশ্বরের অপমান। যারা ধর্মের নাম করে অপরাধ করছে, তারা স্বর্গ তো দূর, নরকেও স্থান পাবে না।”
সরকারের কড়া পদক্ষেপ ও নিষেধাজ্ঞা
এই পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশ সরকার নির্দেশ জারি করে জানিয়েছে, কোনও কানওয়ারি তীর্থযাত্রী ট্রিশূল, লাঠি, রড, হকি স্টিক, বা এই ধরনের অস্ত্রসজ্জা নিয়ে যাত্রা করতে পারবেন না। বাইকের সাইলেন্সার খুলে শব্দদূষণ করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে, রাস্তায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগীর সমর্থন
এই হিংসার খবর প্রকাশ্যে আসতেই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “কানওয়ারিদের বারবার মিডিয়ার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। তাঁদের জঙ্গি বলা হচ্ছে, গুণ্ডা বলা হচ্ছে। এটি ভারতীয় সংস্কৃতির উপর আঘাত। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখে গোটা সম্প্রদায়কে দোষী করা অন্যায়।” যোগী আরও বলেন, “শান্তিপূর্ণ তীর্থযাত্রার জন্য সরকার সবরকম সহায়তা দিচ্ছে। যারা নিয়মভঙ্গ করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এতে ধর্মীয় আবেগে আঘাত না লাগে, সেটাও দেখতে হবে।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
চলতি বছরের কানওয়ার যাত্রা শেষ হবে ২৩ জুলাই। তার আগে প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়ছে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা ও শান্তির দাবিতে প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা চায়। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে একটি বড় প্রশ্ন সামনে উঠে আসছে— ধর্মীয় তীর্থযাত্রা কি এখন সহিংস শক্তির হাতিয়ার হয়ে উঠছে? নাকি প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বৈত মাপকাঠির কারণেই এই গুণ্ডামির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না? সমাজে এই প্রশ্ন ঘনীভূত হচ্ছে।
