আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রতি বছর সাপের কামড়ে বহু মানুষ মারা যায়। সাপের বিষ নিয়ে নতুন কোনও ওষুধ তেমনভাবে আবিষ্কার হয়নি। কয়েকটি চিরাচরিত ওষুধ দেওয়া হলেও যাদের সাপে কেটেছে, তাদের দেহে অনেক সময় কাজ করেনি সেই অ্যান্টিভেনম। তাই এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে সাপের বিষের ওষুধ তৈরির পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যদি এই পরীক্ষা সফল হয়ে যায় তাহলে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।
যদি সাপের বিষের ওষুধ সকলের ঘরে সর্দি-জ্বরের মতোই থাকে তাহলে সাপ নিয়ে চিন্তা কমবে। সাপ কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই তার ওষুধ দেওয়া হবে। ফলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেই রোগী প্রাথমিকভাবে ভেঙে পড়বেন না। তার দেহে সাপের বিষের ওষুধ আগেই পৌঁছে যাবে। এআই ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এমন প্রোটিন ডিজাইন করেছেন যা কোবরা এবং অন্যান্য বিষাক্ত সাপ কামড়ালে অ্যান্টি ভেনমের কাজ করবে।
গবেষকরা নেচার পত্রিকায় জানিয়েছেন, এই প্রোটিনগুলি ইতিমধ্যেই ল্যাব পরীক্ষায় ইঁদুরের জীবন বাঁচিয়েছে। জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ব্রাউনসউইগের একজন অ্যান্টিবডি গবেষক জানাচ্ছেন, এই প্রোটিনগুলি সত্যিই তাদের কাজ করছে। সাপে কামড়ানোর পর ইঁদুরগুলো বেঁচে আছে।

পরীক্ষাটির বাস্তব-জীবনের প্রয়োগের প্রতিনিধিত্ব করে রসায়নে ২০২৪ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনজন বিজ্ঞানী। বর্তমান অ্যান্টিভেনম উৎপাদনকারীরা সাপকে দুধ দিয়ে তাদের মুখ থেকে বিষ বের করে আনেন। সেই বিষের একটি ছোট ডোজ ঘোড়া বা অন্যান্য বড় প্রাণীর মধ্যে ইনজেকশন করে দেওয়া হয়, যেখান থেকে উৎপাদকরা পরে অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করে।
অ্যান্টিভেনম তৈরি করা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ, তাই বিজ্ঞানীরা অন্যান্য পদ্ধতির সন্ধান করছেন। বেকার এবং জেনকিন্স এআই দিয়ে এমন প্রোটিন ডিজাইন করেছেন যা সাপের বিষের ক্ষতিকারক প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে। কোবরা টক্সিনের প্রাণঘাতী ডোজের পর গবেষক দলটি ২০টি ইঁদুরকে কাস্টম প্রোটিন দিয়ে ইনজেকশন দেয়।
জেনকিন্স বলছেন, আমরা পরীক্ষার ফল সম্পর্কে খুব খুব উত্তেজিত ছিলাম। এআই নির্মিত প্রোটিন ইঁদুরগুলোর দেহে কাজ করতে শুরু করেছিল।’ তবে জেনকিন্স এও জানিয়েছেন, নতুন অধ্যয়নটি সাপের বিষ প্রতিকারের প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। আরও পরীক্ষা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সফলতা আসবে বলে মনে করেন এই বিজ্ঞানী।

কোবরা সাপের বিষে ১০০ শতাংশ কার্যকর হল এআই-য়ের তৈরি করা ওষুধ। ২০২৪ সালের কেমিস্ট্রিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক এই গবেষণার কাজে প্রধান হিসাবে ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই এআই-কে দিয়ে সাপের বিষের ওষুধ নিয়ে কাজ করছিলেন। এবার থেকে সাপের বিষের ওষুধ হবে অনেক বেশি কার্যকরী। শুধু তাই নয়, বিশ্বের প্রতিটি ওষুধের দোকানে সামান্য ওষুধের মতোই পাওয়া যাবে সাপের ওষুধ।
কোবরা সাপের বিষ একটি অতি মারাত্মক একটি বিষ। তাকে যখন এআই জয় করতে পেয়েছে তাহলে বাকি সাপের কামড়ের ক্ষেত্রেও একই কাজ হবে বলে অনুমান করছেন গবেষকরা। এই কাজকে এআই করানোর জন্য বহু সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। তবে সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে সাপের বিষের যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলল এআই।

একটি ইঁদুরের দেহে এই বিষ প্রথমে প্রবেশ করানো হয়। তারপর তার দেহে এই বিষের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। তবে অবাক করা কাণ্ড। একেবারে সুস্থ হয়ে উঠেছে ইঁদুরটি। এতদিন যে সাপের বিষের ওষুধ ছিল সেটি এতটা কার্যকরী ছিল না বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। এতদিন ধরে একটি সাপের ওষুধ তৈরি করতে হলে হাজার হাজার ডলার খরচ হত। এখানেই শেষ নয় এটি তৈরি করতে কয়েকমাস সময়ও লেগে যেত।
আরও পড়ুন: নদী ভাঙন নিয়ে অবাক করা তথ্য, চোখ কপালে উঠল বিজ্ঞানীদের
তবে এবার ওই ওষুধ আবিষ্কারের ফলে শুধু বিদেশের মাটিতেই নয়, ভারতেও মিলবে এই সাপের বিষ। অল্প সময়ের মধ্যে অতি কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে এই সাপের ওষুধ। দামও থাকবে সকলের নাগালের মধ্যে।
সাপ থেকে সকলেই ভয় পান। সাপের বিষে প্রতি বছর প্রচুর মানুষ মারা যান। অনেকে আবার পঙ্গু হয়েও দিন কাটান। আবার অনেক সময় দেখা গিয়েছে সাপের বিষের ওষুধ নেওয়ার পরও কিছুদিন পর মারা গিয়েছে সেই ব্যক্তি। সাপের বিষ নিয়ে নতুন কোনও ওষুধ তেমনভাবে আবিষ্কার হয়নি। কয়েকটি চিরাচরিত ওষুধ থাকলেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসা হয়নি। যাদের সাপে কেটেছে তাদের দেহে অনেক সময় কাজ করেনি এই বিষ। সাপের কামড়ের পর দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কথা ছিল সেটি অনেক সময় তৈরি হয়নি। তবে এই ওষুধ এবার জীবনদায়ী হিসাবে দেখা দেবে। চিরতরে মিটবে সাপের ভয়।
