আজকাল ওয়েবডেস্ক: নদীর গতিপথে ভাঙন বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে, যার মধ্যে প্রধান কারণগুলি হল জলের স্রোত, নদীর বাঁক, এবং নরম মাটি। নদীর স্রোত যখন তীরবর্তী নরম মাটি বা বালির উপর আঘাত করে, তখন সেটি ক্ষয় হতে থাকে। এছাড়া, নদীর বাঁকগুলোতে স্রোতের বেগ বেশি থাকার কারণেও ভাঙন দেখা যায়। এছাড়াও, বন্যা বা অতিরিক্ত জলের প্রবাহের কারণেও নদীর গতিপথ ভেঙে যেতে পারে।


জলের স্রোত: নদীর স্রোত হল ভাঙনের প্রধান কারণ। স্রোত যখন তীরবর্তী মাটির উপর এসে পড়ে, তখন তা ধীরে ধীরে ক্ষয় করতে শুরু করে। বিশেষ করে নদীর বাঁকগুলোতে স্রোতের বেগ বেশি থাকে, ফলে সেখানে ভাঙন বেশি দেখা যায়।

নদীর বাঁক: নদী তার গতিপথে বাঁক নেয়, এবং এই বাঁকগুলোই ভাঙনের অন্যতম কারণ। বাঁকের বাইরের দিকে স্রোত বেশি থাকে, ফলে সেখানে ক্ষয় বেশি হয়। ভেতরের দিকে স্রোত কম থাকার কারণে পলি জমা হতে থাকে। এই কারণে নদীর গতিপথ ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকে।

নদীর গভীরতা ও প্রস্থ: নদীর গভীরতা এবং প্রস্থও ভাঙনের উপর প্রভাব ফেলে। গভীর এবং চওড়া নদীতে ভাঙন বেশি দেখা যায়।
মাটির গঠন: নদীর তীরবর্তী মাটির গঠনও ভাঙনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি নদীর তীরবর্তী মাটি নরম ও সহজে ক্ষয় হয়ে যায়, তবে ভাঙ্গন দ্রুত হবে।
বন্যা: বন্যা নদীর জলের প্রবাহের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যার ফলে স্রোতের বেগও বাড়ে। ফলে, নদীর তীরবর্তী মাটি ও বালু বেশি পরিমাণে ক্ষয় হয়ে যায় এবং ভাঙন দেখা দেয়। 
ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তন: নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার পেছনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণও দায়ী। যেমন - ভূমিকম্প, ভূমিধস ইত্যাদি। নদী ভাঙ্গন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, তবে কিছু ক্ষেত্রে মানুষের কার্যকলাপও এর জন্য দায়ী হতে পারে। যেমন - নদীর স্বাভাবিক গতিপথে বাঁধ বা অন্য কোনও কাঠামো তৈরি করলে নদীর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে, যা ভাঙনের কারণ হতে পারে।


যেকোনো অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব টিকে থাকার জন্য সে অঞ্চলের নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০-২৫ বছর পূর্বেও নদী-নালায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এছাড়া অজস্র অনুজীব, শেওলা, সাপ, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক, আগাছা দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে অনেক প্রজাতির মাছ, অনুজীব, শামুক, ঝিনুক বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক এক বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সমগ্র প্রজাতির মধ্যে উভচর প্রাণীরা সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ ক্ষতির মুখে রয়েছে।

আরও পড়ুন: বন্ধ হল ১০ মিলিয়ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, তালিকায় নাম থাকতে পারে আপনারও


বিশ্বের বৃহত্তম নদী আমাজনকে ঘিরে ভয়াবহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, আমাজনের একটি প্রধান উপনদী সেলিমোস নদীর পানি সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। বিপন্ন গোলাপি ডলফিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল টেফেতে সেলিমোসের একটি শাখা সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে, যার ফলে মিষ্টি জলের ডলফিন মারা যাচ্ছে। 

 


এছাড়া, ফ্রান্সের দীর্ঘতম নদী লয়ারের কিছু জায়গায় এখন পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। ইতালির পো নদীর জলের প্রবাহ একেবারে কমে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে চাষাবাদে। চীনের ইয়াংজি নদী থেকে সিচুয়ান অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রায় ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বর্তমানে নদীটির প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমে গেছে। জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা নদী রাইন, যা ইউরোপীয় অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল, বর্তমানে এর তলদেশ ভেসে ওঠায় জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, যা পুরো পণ্য পরিবহনের প্রক্রিয়াকে ধীর করে ফেলেছে। এজন্য পণ্য পরিবহন আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে, যার প্রভাব সাধারণ ভোক্তাদের ওপর পড়ছে।