আজকাল ওয়েবডেস্ক: আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার এক মাসের মাথায় এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো প্রকাশ করল তাদের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট। শনিবার রাতে প্রকাশিত এই ১৫ পাতার রিপোর্টে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে, যা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াকে। প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার পেছনে পাখির ধাক্কা কিংবা অন্তর্ঘাতের কোনও প্রমাণ মেলেনি। এমনকি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার তত্ত্বও একপ্রকার নস্যাৎ করে দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু তারপরেও কীভাবে আচমকা বিমানের দুই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে বড় প্রশ্ন। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে, বিমানের দুই ইঞ্জিন একসঙ্গে ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ মোডে চলে যায়।

ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার ঠিক আগে বিমানটি পৌঁছে গিয়েছিল সর্বোচ্চ গতিবেগে। এর পরপরই বন্ধ হয়ে যায় দুটি ইঞ্জিন। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে ককপিটে দুই পাইলটের কথোপকথন রেকর্ড হয়েছে ব্ল্যাক বক্সে। একজন বলেন, ‘ইঞ্জিন বন্ধ করলে কেন?’ অপরজন উত্তর দেন, ‘আমি কিছু বন্ধ করিনি’। জানা গিয়েছে, ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে ব়্যাম এয়ার টার্বাইন চালু করা হয়েছিল, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ জোগান দেওয়া যায়। কিন্তু তাও যথেষ্ট কাজে আসেনি। জ্বালানির পরিমাণ পর্যাপ্ত ছিল, এবং সরবরাহেও কোনও সমস্যা ছিল না বলে রিপোর্টে উল্লেখ। অন্তর্ঘাতেরও কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে জ্বালানি সুইচে কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল কিনা, তা এখনও তদন্তের আওতায় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রাথমিক রিপোর্টে।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের প্রধান পাইলট সুমিত সভরওয়াল ছিলেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ—৮২০০ ঘণ্টা বিমানে উড়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। সহকারী পাইলট ক্লাইভ কুন্দর-এরও ১১০০ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ হেন অভিজ্ঞ পাইলটরা ভুলবশত জ্বালানি বন্ধ করে দেবেন, এটা অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে, যান্ত্রিক ত্রুটির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কী কারণে বিমানটির জ্বালানি বন্ধ হয়ে গেল? স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ত্রুটি? নাকি অন্য কোনও প্রযুক্তিগত গোলযোগ? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। বোয়িং কোম্পানিকেও এখনো পর্যন্ত কোনও নোটিস পাঠানো হয়নি। তদন্ত এখনও অনেকটাই বাকি বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা বা ICAO-র নির্দেশিকা অনুসারে, দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। গত ১২ জুন আমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি। কিন্তু ওড়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে একটি মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল ভবনের উপরে ভেঙে পড়েছিল বিমানটি। গত মাসে, অসামরিক বিমান পরিবহণ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী মুরলীধর মোহন জানিয়েছিলেন, তদন্তের সময়ে অন্তর্ঘাত-সহ দুর্ঘটনার সম্ভাব্য সকল কারণ বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। মুরলীধর মোহন বলেছিলেন, দু’টি ইঞ্জিনই একসঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এমনটা কখনও ঘটেনি। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে ইঞ্জিনের কোনও সমস্যা ছিল নাকি জ্বালানি সরবরাহের সমস্যা ছিল।’