আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমরা যখন কোনও পাখির কথা ভাবি, আমাদের কল্পনায় প্রথমেই ভেসে ওঠে তাদের ডানার ঝাপটায় মূহুর্তে আকাশ ছোঁয়ার দৃশ্য। পাখি মানেই উড়ে চলা, নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো কিন্তু প্রকৃতির বিচিত্র নিয়মে সব পাখির ভাগ্যে আবার আকাশভ্রমণ নেই। কেউ কেউ হারিয়েছে সেই ক্ষমতা। ডানা থাকা স্বত্ত্বেও কেউ জলের নিচে সাঁতার কাটায় দক্ষ, কেউ আবার মাটির বুকে দ্রুত গতিতে ছুটে চলায় পারদর্শী।


তবে এদের থেকে এক বিস্ময়কর প্রজাতি ছিল নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপে। নাম ছিল সাউথ আইল্যান্ড জায়ান্ট মোয়া। মোয়া’র উচ্চতা ছিল প্রায় ১২ থেকে ১৩ ফুট (প্রায় ৪ মিটার), যার বেশিরভাগটাই ছিল তার লম্বা, নমনীয় গলা। পূর্ণবয়স্ক একটি পাখির ভর ছিল প্রায় ২৭০ কেজি। একটি পাখি, যার ভর একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘের কাছাকাছি! তবে এরা ছিল শান্ত প্রকৃতির। শাকাহারি এই পাখিটি জঙ্গলের মাটিতে ঘুরে ঘুরে ফার্ন, গুল্ম ও উঁচু ডালের পাতা খেত। অনেকটা যেন পালকের চাদরে মোড়া এক জিরাফ।


এই পাখিদের ফের একবার ফিরিয়ে নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করছেন যেভাবে এই পাখিরা হরিয়ে গিয়েছিল সেখান থেকে এরা ফের ফিরতে পারে পৃথিবীতে। যদি সেটাই হয় তাহলে সেখান থেকে ফের পৃথিবীতে নতুন করে বিবর্তনের নতুন ইতিহাস লেখা হতেই পারে।

 আরও পড়ুন:  এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের এই মিউচুয়াল ফান্ডগুলি যেন সোনার খনি, মিলতে পারে সর্বোচ্চ রিটার্ন


অস্ট্রিচ বা এমুর মতো অনেকে উড়তে না পারলেও তাদের শরীরে ডানার কিছু চিহ্ন থাকে—অন্তত অন্তঃকঙ্কালের ভেতর ছোট্ট নিস্ক্রিয় ডানার অস্থি থাকে। কিন্তু মোয়া ছিল এক ব্যতিক্রম। পাখি কিন্তু তার শরীরে ডানার কোনও চিহ্নই ছিল না। ডানার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি তাকে পাখির বিবর্তনে এক বিশেষ অধ্যায়ে পরিণত করেছে।


মোয়া’র পূর্বপুরুষেরা কয়েক মিলিয়ন বছর আগে নিউজিল্যান্ডে এসে বসবাস শুরু করে। সে সময় এই দ্বীপে কোনও স্থানীয় স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল না। এই শূন্যতা কাজে লাগিয়ে পাখিরাই ভূমির দখল করে নেয়। তাদের মধ্যে কেউ জঙ্গলে বাস করল, কেউ বা আকাশে। কিন্তু মোয়া— বেছে নিল উচ্চতাকে। মুক্ত পরিবেশ, শত্রুহীন জঙ্গল ও শাকাহারি জীব হিসেবে তাদের বিশালতাই হয়ে উঠল টিকে থাকার প্রধান অস্ত্র।


এই দৈত্যাকার পাখির প্রাপ্তবয়স্কদের উপর একমাত্র শিকারি ছিল হাস্ট’স ঈগল। ১৩ শতকের শেষভাগে নিউজিল্যান্ডে আগমন ঘটে মাওরি জাতির । তাদের অস্ত্র ও আগুনের সঙ্গে পাখিরা ছিল সম্পূর্ণ অপরিচিত। মোয়ার বিশাল দেহ ও শান্ত স্বভাব তাদের সহজ শিকার করে তোলে। কয়েক শতকের মধ্যেই, মাত্র মানুষের হাতে পড়েই, বিলুপ্ত হয়ে যায় মোয়ার নয়টি প্রজাতির সবকটিই। ১৪৫০ সাল নাগাদ পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে যায় এই ডানাহীন দৈত্য পাখির পদচিহ্ন।


মোয়া আমাদের শেখায়, পাখি মানেই ডানা নয়। মোয়া ছিল একেবারে অন্যরকম এক পাখি—যার গঠন, জীবনযাপন ও পরিবেশে অভিযোজন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ডাইনোসর যুগের কিছু বিচিত্র জীবের কথা। তার দেহে ছিল পালক, কিন্তু মন ছিল যেন এক স্থলচারী স্তন্যপায়ীর মতো। ডানা হারিয়ে সে জিতে নিয়েছিল ভূমি —তবে আকাশের সঙ্গে বিচ্ছেদের মূল্য দিতে হয়েছিল তাকে শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়ে।