আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০১৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের পরের দৃশ্য। ভারতীয় দল জেতা ম্যাচ মাঠে ফেলে এসে ভারতে ফিরছে। মিতালি রাজের নেতৃত্বাধীন দলকে আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন জেমিমা রড্রিগেজ। সেখান থেকে ২০২৫ সাল।
জেমিমা রড্রিগেজ আজ ১৪০ কোটি ভারতবাসীর মন জয় করে নিলেন। একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারত সর্বোচ্চ ২৬৪ রান তাড়া করে জিতেছিল। বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত তাড়া করল ৩৩৮।
মহিলাদের একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। মহিলা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ভারতীয় মহিলা দল। বৃহস্পতিবার নভি মুম্বইতে জেমিমা রড্রিগেজ শো দেখল ক্রিকেট বিশ্ব।
একটানা ১৫ ম্যাচ জেতা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল ভারত। শুধু কী তাই? ৩৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতাটাও রেকর্ড। তাও আবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো মঞ্চে।

ম্যাচ জিতে ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়াম জেমিমার চোখে জল দেখল, দেখল স্মৃতি মান্ধানা এবং হরমনপ্রীত কৌর একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন। পোস্ট ম্যাচে কথা বলতে গিয়েও গলা ধরে আসছিল জেমিমার।
ধন্যবাদ জানালেন নিজের মা-বাবা, কোচকে।অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেননি যে এত বড় লক্ষ্য ভারত তাড়া করে দেবে, তাও আবার শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। চলতি বিশ্বকাপে এক ম্যাচে বাদও পড়েছিলেন জেমিমা।
দলে ফিরে এসে নিজেকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেলেন ভারতীয় ব্যাটার। তিন নম্বরে নেমে একা হাতে ভারতকে ফাইনালে তুললেন। গত বিশ্বকাপে বাদ পড়েছিলেন, এবার সেটা পুষিয়ে দিলেন অনবদ্য ব্যাটিংয়ে।
এদিন ওপেনার প্রতীকা রাওয়ালের বিকল্প হিসেবে মারকুটে শেফালি ভার্মা খেলছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাঁর দিকে গেল না। নিজের চেনা ভূমিকাতেই শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি ফিরে যান মাত্র পাঁচ বল খেলে ১০ রান করে।
সেখান থেকে দলকে জেতার রাস্তায় নামানোর কাজ শুরু করেন জেমিমা রড্রিগেজ এবং স্মৃতি মান্ধানা। শুরুর দিকের ধাক্কা সামলে যখন মনে হচ্ছিল বড় পার্টনারশিপ হবে তখনই আউট হন স্মৃতি।
কিম গার্থের বল তাঁর ব্যাটে লেগেছে সেটা বুঝতেই পারেননি। কিন্তু তারপরেই হরমনপ্রীত এবং জেমিমা ম্যাচে ফেরালেন ভারতকে। হরমনপ্রীত করলেন ৮৮ বল খেলে ৮৯ রান। জেমিমা অপরাজিত রইলেন ১৩৪ বল খেলে ১২৭ খেলে।
এই দুই ক্রিকেটারের পার্টনারশিপে একজন মারছিলেন, একজন ধরছিলেন। জেমিমা একসময় হাঁপিয়ে গিয়েছিলেন, সেই সময় হরমনপ্রীত ধুয়ে দিলেন অজি বোলারদের। ভারত অধিনায়ক প্যাভিলিয়নে ফেরার পর মারার দায়িত্ব নিলেন দীপ্তি শর্মা।
তিনি ফিরলেন ১৭ বল খেলে ২৪ রান করে। দীপ্তি যেখান থেকে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই অজি বোলারদের বাইরে পাঠালেন বাংলার রিচা। তাঁর ১৬ বলে ২৬ রানের মারকুটে ইনিংসে অনেকটাই চাপ কমে যায় ভারতের।
শেষের দিকে আমনজ্যোত কৌর এবং জেমিমা ইতিহাস গড়লেন টিম ইন্ডিয়ার হয়ে। এদিন প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ৩৩৮ রান করে। শুরুতেই ভারতের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর ক্যাচ ফেলেন হিলির। জীবন ফিরে পেয়েও হিলি অবশ্য বড় রান করতে পারেননি।
মাত্র ৫ রানে তিনি বোল্ড হন। অজিদের রান তখন ২৫। শুরুতে উইকেট হারালে চাপ এসে পড়ে যারা ব্যাট করছে তাদের উপরে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা যে অন্য ধাতুতে গড়া। লিচফিল্ড ও পেরি ১৫৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন।
ভারতীয় বোলারদের উপরে নির্দয় হয়ে ওঠেন তাঁরা। উইকেট চলে গেলেও রানের গতি কমেনি অস্ট্রেলিয়ার। লিচফিল্ডকে একবার আউট দিয়ে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। সাজঘরের দিকে হাঁটা লাগান তিনি। কিন্তু দেখা যায় বল লিচফিল্ডের ব্যাটে লেগে বল মাটিতে লাগে।
সিদ্ধান্ত বদলান আম্পায়ার। শেষমেশ লিচফিল্ড থামেন ১১৯ রানে। ৯৩ বলের ইনিংসে সাজানো ছিল ১৭টি বাউন্ডারি ও ৩টি ছক্কা। ১৮০ রানে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় উইকেটটি যায়। এর পরে বেথ মুনি ও পেরি চল্লিশ রান জোড়েন।
যে গতিতে অস্ট্রেলিয়া রান তুলছিল, সেই গতিতে রাশ টানতে সক্ষম হন ভারতের বোলাররা। বেথ মুনি ২২ বলে ২৪ রান করে আউট হন। সাদারল্যান্ড (৩) রান পাননি। পেরি ব্যক্তিগত ৭৭ রানে রাধা যাদবের বলে বোল্ড হন। সেই সময়ে অজিদের রান ছিল পাঁচ উইকেটে ২৪৩।
গার্ডনার (৬৩) ও ম্যাকগ্রা (১২) রান আউট হন। একটা সময়ে মনে হয়েছিল তিনশোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে আটকে রাখা যাবে। কিন্তু সেই অস্ট্রেলিয়া ৪৯.৫ ওভারে করল ৩৩৮ রান। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে শ্রী চরণী ও দীপ্তি শর্মা ২টি করে উইকেট নেন। ক্রান্তি, আমনজ্যোৎ কৌর ও রাধা যাদব একটি করে উইকেট নেন।
