আজকাল ওয়েবডেস্ক: শীতকাল এলেই হৃদযন্ত্রের ওপর বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে যাঁদের আগে থেকেই হৃদরোগ রয়েছে। তাপমাত্রা কমে গেলে শরীরে একাধিক শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে যা হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। চিকিৎসকদের মতে, এই সময় হৃদরোগী ও তাঁদের পরিবারকে আরও বেশি সতর্ক থাকা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এর পেছনে রয়েছে ঠান্ডাজনিত শারীরিক চাপ এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাব। বয়স্ক মানুষ এবং যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি।
শীতকাল হৃদ্রোগের জন্য একটি আদর্শ সময়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদ্যন্ত্রকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। একই সঙ্গে রক্ত কিছুটা ঘন হয়ে ওঠে, যা রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়। এই পরিস্থিতি বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট ভালভের সমস্যা বা আগে থেকেই ব্লক থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
উৎসবের সময়ে অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার, বেশি লবণ ও মদ্যপান, কম শারীরিক পরিশ্রম, ঘুমের অনিয়ম এবং মানসিক চাপ ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে ভোরবেলা হঠাৎ ঠান্ডার সংস্পর্শে আসা—যেমন সকালে হাঁটা বা ঠান্ডা জলে স্নান—তাৎক্ষণিক ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে।
শীতে রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ার কারণে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। পাশাপাশি এই সময়ে ওজন বৃদ্ধি, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, কম শারীরিক কার্যকলাপ এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণও হৃদ্যন্ত্রের ওপর চাপ ফেলে। বয়স্ক ও হৃদরোগীদের গরমে থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
অন্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে শরীরের জলশূন্যতা এবং কম জলপানের কারণে রক্ত আরও ঘন হয়ে যেতে পারে, যা রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া ঠান্ডায় অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়, যা হৃদস্পন্দন দ্রুত করে এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, শীতকালে হৃদরোগ এড়াতে গরম পোশাক পরা, ঘরের ভেতরে হালকা ব্যায়াম করা, হৃদবান্ধব খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, পর্যাপ্ত জল পান করা এবং নিয়মিত ওষুধ খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। হঠাৎ গরম জায়গা থেকে খুব ঠান্ডা পরিবেশে যাওয়াও এড়িয়ে চলতে হবে।
সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং সময়মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় বলে মত চিকিৎসকদের। তাই সকলকে একটু সাবধানে চলতেই হবে এই সময়।
