আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনেকেরই ধারণা, সূর্যের রং স্বাভাবিকভাবেই হলুদ বা কমলা। বাস্তবে এই বিশ্বাসটি এতটাই প্রচলিত যে পাঠ্যবই, কার্টুন কিংবা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক চিত্রণেও সূর্যকে প্রায়ই হলুদ বা কমলা রঙের দেখানো হয়। কিন্তু আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণ বলছে, সূর্যের প্রকৃত রং এই ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না।


আসলে সূর্যের রং কী?
বৈজ্ঞানিকভাবে সূর্য বর্ণালিজুড়ে আলো বিকিরণ করে। এর মধ্যে বেগুনি, নীল, সবুজ, হলুদ ও লাল—সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোই প্রায় সমান মাত্রায় থাকে। এই সব রং একত্রে মিশলে যে আলো তৈরি হয়, সেটি মূলত সাদা। তাই মহাকাশে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে থেকে সূর্যকে দেখলে এটি উজ্জ্বল সাদা রঙের বল হিসেবেই ধরা পড়ে।


সূর্যের আলোর বর্ণালি ধারাবাহিক ঘটনা, অর্থাৎ কোনও একটি নির্দিষ্ট রঙ এতে আধিপত্য বিস্তার করে না। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় সূর্যকে বলা হয় একটি “জি-টাইপ মেইন সিকোয়েন্স স্টার” । এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৫,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আলোর একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিকিরণ সৃষ্টি করে।

 মহাকাশচারী ও উপগ্রহের ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিতেও সূর্যকে দেখা যায় ঝলমলে সাদা রঙে, হলুদ বা কমলা নয়।


তাহলে পৃথিবী থেকে সূর্যকে হলুদ বা কমলা কেন দেখা যায়?
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া ঘটে, যাকে বলা হয় রেলি স্ক্যাটারিং। বায়ুর অণু ও সূক্ষ্ম কণাগুলো ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো—বিশেষ করে নীল ও বেগুনি রঙ—বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে দেয়।


এর ফলে সূর্যের আলো আমাদের চোখে পৌঁছানোর সময় নীল রঙের অংশ কিছুটা কমে যায় এবং অবশিষ্ট আলো হলুদাভ দেখায়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় এই প্রভাব আরও তীব্র হয়, কারণ তখন সূর্যের আলোকে বায়ুমণ্ডলের অনেক বেশি পথ অতিক্রম করতে হয়। তাই সে সময় সূর্য কমলা বা লালচে রঙের বলে মনে হয়।


আবহাওয়া, বায়ুদূষণ কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বাতাসে কণার পরিমাণ বাড়লে এই রঙ পরিবর্তন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে এগুলো সবই বায়ুমণ্ডলীয় প্রভাব, সূর্যের প্রকৃত রঙের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।


মানুষের চোখে সব দৃশ্যমান রং সমানভাবে মিশে গেলে সেটিকে সাদা হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু বায়ুমণ্ডলের কারণে রঙের ভারসাম্যে সামান্য পরিবর্তন হলেই আমাদের চোখ সেটিকে হলুদ বলে ব্যাখ্যা করে। বিজ্ঞান বলছে, বায়ুমণ্ডলের বাইরে থেকে দেখলে সূর্য আদতে এক উজ্জ্বল সাদা নক্ষত্র—হলুদ বা কমলা নয়।