আজকাল ওয়েবডেস্ক: বলকে কথা বলাতেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রম। শর্ট রান আপে ব্যাটারের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিতেন তিনি। তাঁর রিভার্স সুইংয়ের মোকাবিলা করতে ভয় পেতেন বিশ্বের সব তারকা ব্যাটাররা।
কেরিয়ারের মধ্য গগনে যখন বিরাজ করছেন আক্রম, সেই সময়ে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে আক্রমের। শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে বড় ধাক্কা। কিন্তু তিনি তো ওয়াসিম আক্রম। শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে ওয়াসিম আক্রম খেলে গিয়েছেন। তাঁর সমস্যার কথা বুঝতেও পারেননি কেউই।
আক্রম পুরনো ঘটনার প্রসঙ্গ উত্থাপ্পন করে বলেছেন, ''আমার ওজন কমে যাচ্ছিল। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। সব সময়ে তেষ্টা পেত। বহুবার বাথরুম যেতে হত। আমার বাবাকে বলেছিলাম, আমি একদম ভাল নেই।'' ১৯৯৭ সালে ‘টাইপ ওয়ান’ ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাঁর। তখন থেকেই নিয়মিত ইনসুলিন নিতেন তিনি। খেলা চলাকালীনও ইনসুলিন নিতেন।
আরও পড়ুন: 'এরকম ভুল করলে ...', ইস্টবেঙ্গলের হারের ময়নাতদন্তে প্রাক্তন তারকা, কাকে তুললেন 'কাঠগড়ায়'?
সেই সময়ে ডায়াবেটিস সম্পর্কে ধারণা খুব একটা স্পষ্ট ছিল না। রোগটা সম্পর্কেও সম্যক ধারণা কম ছিল। আক্রম বলছেন, ''এই ব্লাড সুগার ব্যাপারটা কী?'' আক্রমের প্রয়াত স্ত্রী হুমার কথা উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানের তারকা পেসার। তিনি বলছেন, ''হুমা আমাকে পরামর্শ দিত। সেগুলো খুব কাজে লেগেছিল। আমি চিকিৎসককে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি কি ক্রিকেট খেলতে পারব? ডাক্তার বলেছিলেন, লেভেল কমলেই আপনি খেলতে পারবেন। বাইরে খেলতে গেলে সমস্যা বাড়ত। তখনকার সময়ে কী খেতে হবে, কী খাওয়া বারণ, সেই সম্পর্কে ধারণা ছিল না।''
গোটা পাকিস্তান দল সেই সময়ে আক্রমকে সাহায্য করেছিল। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল। প্রাক্তন পাক অধিনায়ক বলছেন, ''আমি আম্পায়ারের হাতে ট্যাবলেট দিয়ে রাখতাম। সুগার লেভেল কমে গেলে তা খেয়ে নিতাম। একটা ট্যাবলেট খেলে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে সুগার লেভেল আবার স্বাভাবিক হয়ে যেত।''
ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে সঙ্গে ইনসুলিন রাখার জন্যই অপদস্থ হতে হয়েছিল কিংবদন্তি ফাস্ট বোলারকে! সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছিলেন, ''ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে খুব কষ্ট পেয়েছি। ইনসুলিন সঙ্গে নিয়ে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়াই। কিন্তু কখনও এর জন্য অপদস্থ হতে হয়নি আমাকে। অভদ্রভাবে আমাকে প্রশ্ন করা হয়। সবার সামনে ইনসুলিন বের করে প্লাস্টিকের ব্যাগে ফেলে দিতে বলা হয়।'' আক্রমের সেই টুইটে নড়েচড়ে বসেছিল ম্যানচেস্টার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা ক্ষমা চান আক্রমের কাছে।
এত রকমের সমস্যা নিয়েও আক্রম কিন্তু বল হাতে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর বলে রান নেওয়া খুব কঠিন ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলতেন, আক্রম ছ'টা ডেলিভারি ছ'রকমের করতে পারতেন।
২০০৩ বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন শচীন তেণ্ডুলকর। তিনি আগেই ফেরাতে পারতেন মাস্টার ব্লাস্টারকে। আবদুল রজ্জাককে পনেরো গজি বৃত্তের মধ্যে রেখেছিলেন। আক্রমের কথা না শুনে রজ্জাক এগিয়ে আসেন। শচীন পরের বলেই ক্যাচ তোলেন। কিন্তু রজ্জাক এগিয়ে আসায় ক্যাচ ধরতে পারেননি। তখন হতাশ আক্রম বলে ওঠেন, ''তুই কার ক্যাচ ছেড়েছিস জানিস?'' শারীরিক এত সমস্যা নিয়ে আক্রম কীভাবে এত ভাল খেলতেন সেটাই রহস্য।
