আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে থেমে গেল ইস্টবেঙ্গলের দৌড়। ডায়মন্ড হারবারের কাছে ২-১ গোলে হেরে লাল-হলুদ বিদায় নিয়েছে।
অস্কার ব্রজোঁর দলের বিদায়ের জন্য সমর্থকরা কাঠগড়ায় তুলছেন লাল-হলুদ গোলকিপার প্রভসুখান গিলকে। সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল। কতটা দায়ী গিল? তাঁর জন্যই কি ফাইনালের ছাড়পত্র জোগাড় করতে পারল না লাল-হলুদ ব্রিগেড?
প্রাক্তন গোলকিপার তনুময় বসুকে এমন প্রশ্নই করা হয়েছিল। বহু যুদ্ধের সৈনিক তনুময় ব্যাখ্যা করে বলছেন, ''প্রথম যে গোলটা ডায়মন্ড হারবার করেছে, সেই গোলের সময়ে গিল কেমন যেন মাঝরাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। ব্লক করল না। গিলের ঝাঁপানো উচিত ছিল। মিকেল কোরাৎজার বাইসাইকেল কিকটা ভাল মেরেছে, এবিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। তবে বাই সাইকেল কিক মারার সুযোগটাই তো ও পায় না। বলটা শূন্যে ছিল, মিকেল বাইসাইকেল কিকটা মারার সময়ে গিলের উচিত ছিল বলের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়া। ও যদি ঝাঁপিয়ে পড়তো, তাহলে ফাউল পেত। সেই ঝুঁকিটাই তো নিল না গিল।''
আরও পড়ুন: 'আর কী করলে দলে জায়গা পাবে শ্রেয়স', এশিয়া কাপের দলে ছেলে জায়গা না পাওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া বাবার ...
দ্বিতীয় গোল হজম করার পিছনেও কি ইস্টবেঙ্গল গোলকিপারের ভূমিকা রয়েছে? তনুময় বলছেন, '' ডায়মন্ড হারবারের দ্বিতীয় গোলের ক্ষেত্রেও গিলই দায়ী। বলটা পেয়েও যেন ও পেল না। এই সব ম্যাচে একজন গোলকিপার যদি এমন ভুল করে বসে, তাহলে তো ম্যাচ হারতে হবেই।'' ইস্টবেঙ্গল একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু গোল আর হয়নি। গোলগুলো হয়ে গেলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হলেও হতে পারত। বড় ম্যাচের পরের ম্যাচেই হোঁচট খায়, এই অরণ্যপ্রবাদও মিলে গেল। তনুময় বলছেন, ''মোহনবাগানের বিরুদ্ধে যতটা গুরুত্ব দিয়ে খেলেছিল, যতটা সিরিয়াস ছিল, এই ম্যাচটায় সেটা দেখা যায়নি। তাছাড়া ডায়মন্ড হারবার মরিয়া লড়াই করেছে। ওদের লড়াইকে সাধুবাদ জানাতেই হবে।''

ইস্টবেঙ্গলের রিজার্ভ বেঞ্চে বসে রয়েছেন দেবজিৎ মজুমদারের মতো অভিজ্ঞ গোলকিপার। গিলের পরিবর্তে দেবজিতকে খেলালে ছবিটা কি অন্যরকম হত? অভিজ্ঞ তনুময় বলছেন, ''আমার মনে হয় উচ্চতা একটা ফ্যাক্টর। ডায়মন্ড হারবারের আপফ্রন্টে যারা ছিল, তাদের উচ্চতা বেশ ভাল। সেই কারণে ব্রজোঁ হয়তো গিলকে গোল আগলানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। গিল গতবারও খেলেছে। সেই জায়গা থেকে ব্রজোঁ ওকে নামিয়েছিলেন। এটা কোচের সিদ্ধান্ত।''
অভিজ্ঞ প্রাক্তন গোলকিপার মনে করেন, এই মুহূর্তে দেশের ফুটবলে ভাল গোলকিপারের বড় অভাব। ডায়মন্ড হারবারের গোলকিপার মিরশাদ যে গোলটা হজম করেছেন, তা দেখার পরে তনুময় বলছেন, ''আনোয়ারের শট থেকে মিরশাদ যে গোলটা খেয়েছে, আমার দেখে ভাল লাগেনি। একজন গোলকিপার এভাবে কেন গোল খাবে? স্টেপ আউটই করেনি মিরশাদ। ফ্ল্যাট ফুটে ছিল। বলটাও রিচ করতে পারেনি।'' এক গোলে পিছিয়ে থাকার পরমুহূর্তেই আনোয়ারের দূরপাল্লার শটে সমতা ফিরিয়ে আনে ইস্টবেঙ্গল। তখন আশা জেগেছিল ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু জবি জাস্টিন গোল করে ইস্টবেঙ্গলের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন।
এবারের মরশুমে ভেবেচিন্তে দলগঠন করেছে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু গিলের ভুলে সেমি-যুদ্ধে থেমে যেতে হল অস্কার ব্রজোঁর দলকে। আগামিদিনের জন্য কী পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাক্তন গোলকিপার? তনুময় বসু বলছেন, ''ওদের প্র্যাকটিস করিয়ে করিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। অনুশীলনের মাধ্যমে রিঅ্যাকশন, রিফ্লেক্স আরও বাড়াতে হবে।'' ডুরান্ড কাপে হার থেকে শিক্ষা নিতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। পরবর্তী টুর্নামেন্টের আগে হাতে কিছুটা হলেও সময় রয়েছে। এই সময়ে নিজেদের তৈরি করে নিতে হবে। অস্কার ব্রজোঁ তাঁর দলকে কীভাবে তৈরি করেন সেটাই এখন দেখার।
