কৃশানু মজুমদার: ১ ডিসেম্বর, ২০০৫। এভার রেডিইস্টবেঙ্গল ১।

আবার বছর কুড়ি পরে...

২০ আগস্ট, ২০২৫। ডায়মন্ড হারবারইস্টবেঙ্গল ১।

প্রথমটি আইএফএ শিল্ডের সেমিফাইনালদ্বিতীয়টি ডুরান্ড কাপের শেষ চারের লড়াই

কিবু ভিকুনার দলের হীরকদ্যুতির ছটায় ইস্টবেঙ্গল পথ হারাল ডুরান্ড কাপে। দৃশ্যপটে ভেসে উঠল কুড়ি বছর আগের এক ম্যাচডায়মন্ড হারবারের চোখধাঁধানো খেলা ফুটবলপাগলদের স্মৃতিতে জাগাল এভার রেডিকে। বর্তমানে যা ইউনাইটেড স্পোর্টস। 

এভার রেডির প্রাক্তন ফুটবলার অনুপম সরকার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখেন, ''ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব আইএফএ শিল্ডে এভার রেডি ক্লাবের কথা মনে করিয়ে দিল'' কুড়ি বছর আগের শিল্ডে বিপ্লব ঘটিয়েছিল এভার রেডি। সেই সময়ে সংবাদপত্রে শিরোনাম হত, 'ওরা সব সময়ে তৈরি, ওরা এভার রেডি'

আলোকেশ কুণ্ডু, নবাব ভট্টাচার্য, রতন সাহাদের ক্লাবের স্বপ্ন শেষমেশ ভেঙে যায় জার্মানির বিখ্যাত ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের কাছে। ফাইনালে বায়ার্নের পঞ্চবাণে ঘায়েল হন অনুপম-লালকমল-অমূল্যরা। 

No photo description available.

সেদিন হয়তো থেমে গিয়েছিল এভার রেডি কিন্তু তাদের লড়াই ছাপ ফেলে গিয়েছিল। কুড়ি বছর পরেও সেই লড়াইয়ের কথা উঠলে ফুটবলপ্রেমীরা উত্তেজিত হন। চায়ের পেয়ালায় তুফান ওঠে।

আরও পড়ুন: এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কি খেলবে ভারত? এল বড় আপডেট

অনুপম ফিরে যাচ্ছেন অতীতে। নস্ট্যালজিক অনুপম বলে চলেন, ''ডায়মন্ড হারবার আমার স্মৃতি উসকে দিল। কী খেলাটাই না সেবারের শিল্ডে খেলেছিলাম আমরা। জেসিটিকে হারিয়েছিলাম টাইব্রেকারেইস্টবেঙ্গলকে সেমিফাইনালে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছই। ইস্টবেঙ্গল তখন ভারতকাঁপানো দল। আশিয়ান কাপ জিতেছে। তাদের আমরা হারিয়ে দিয়েছিলাম। ঠিক যেমন ডায়মন্ড হারবার এবার জামশেদপুর, ইস্টবেঙ্গলকে হারাল। আমি চাই ডায়মন্ড হারবার এবার কাপটা আনুক। ওরা ডিজার্ভ করে।''

কথায় বলে, কিছু স্মৃতি থাকে হৃদয়ের কোণে, যা আমাদের অতীতের গল্প শোনায়। সেই সোনালী অতীত কখনও হাসায় আবার কখনও কাঁদায়চলতি মাসের ২০ তারিখ ইইনাইটেড স্পোর্টস কর্তা নবাব ভট্টাচার্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এভার রেডি-মোহনবাগান ম্যাচ রিপোর্টের পেপার কাটিং পোস্ট করেন ফেসবুকে। সেই ম্যাচে এভার রেডি ১-০ গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগানকে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, 'এভার রেডি ইউজিন মেকস বাগান ব্লিড'

ছবিতে দেখা যাচ্ছে সুনীল ছেত্রীর শরীরের ভিতরে ঢুকে গিয়ে অনুপম মরিয়া ক্লিয়ার করছেন। ইস্টবেঙ্গল-ডায়মন্ড হারবার ম্যাচে প্রভসুখান গিলের হতশ্রী গোল হজম করার প্রসঙ্গ উত্থাপ্পন করে প্রাক্তন লাল-হলুদ ডিফেন্ডার অনুপম বলছিলেন, ''ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার গিল প্রথম গোলটার ক্ষেত্রে ওদের মিকেলকে সুযোগ করে দিল। আমার মনে পড়ছিল মোহনবাগান-এভার রেডি ম্যাচের একটা মুহূর্তের কথা। বেটো তখন মোহনবাগানে। সুব্রত ভট্টাচার্য কোচ। টপ বক্সের উপরে বেটো বুক দিয়ে বল রিসিভ করেই বাই সাইকেল কিক মারতে যাচ্ছে। আমি বিপদ বুঝে পিছন থেকে শরীর ছুড়ে দিই। বেটোর মারা শট আমার বুকে লাগে। নাকে লাগে বেটোর লাথি। রেফারি আমাদের ফাউল দিয়েছিলগিলও তো সেরকম করতেই পারত। ঝাঁপিয়ে পড়লে গোলটা হত না।''

 

নবাবের পোস্ট করা ছবিতে কমেন্ট হিসেবে অনুপম লিখেছেন, ''সেই সময়ে মনে জেদ, পেটে খিদে, আর জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন ভরা একটা মন ছিল। তাই ইস্ট-মোহন দেখলে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টায় থাকতাম। এও আমার জীবনের অন্যতম সেরা সময়''

May be an image of 2 people, people playing soccer, people playing football and text

শিল্ড ফাইনালে এক সময়ে বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়ে যাচ্ছিল এভার রেডিলালকমল ভৌমিক বায়ার্নের রক্ষণ টলিয়ে দিয়ে গোল করেছিলেন। অনুপম বলছেন, ''বায়ার্নের দলে ক্রিশ্চিয়ান সাবা নামে একজন স্টপার ছিল। আর ওদের স্ট্রাইকার 'ফুটের উপরে লম্বা ছিল। কর্নারের সময়ে আমি ওদের মাঝে পড়ে যাই। কাকে মার্কিং করব বুঝতে পারছিলাম না। আমি দেখি ওরা ওদের ভাষায় কথা বলছে আর আমাকে দেখে হাসছে। আমার উচ্চতা ওদের থেকে কম বলেই হয়তো কিছু বলছিল। ভেবেছিল সহজেই ওরা হেড করে চলে যাবে। আমি হাল ছাড়িনিলড়ে গিয়েছিলাম। আমরা সবাই সেদিন জানপ্রাণ দিয়ে খেলেছিলাম।''

এভার রেডির সেনানীদের চোয়াল চাপা লড়াই একসময়ে থামতই সেই ফাইনালে। অনুপম বলছেন, ''আমাদের আফশোস হয়েছিলবায়ার্নের মতো দলের সঙ্গে লড়াইটাও কৃতিত্বেরই ছিল। পরবর্তীকালে ওই দলটার অনেকেই জাতীয় দলের হয়ে নেমেছিল।''

 

অর্থবল ছিল না এভার রেডির, পুঁজি ছিল না। আন্তরিকতার কোনও কমতি ছিল না। ছিল ভালবাসা। কর্তারা মিষ্টি খাওয়াতেন নিজেদের হাতে। ম্যাচের আগেরদিন ক্যাডবেরি দিতেন ফুটবলারদেরকর্তারাই কিট বইতেন। কেউ খেলোয়াড়দের বুট নিয়ে যেতেন হাতে করে। কে যে অফিসিয়াল বোঝা মুস্কিল হয়ে পড়ত। আন্তরিকতা-ভালবাসা-হৃদয় দিয়ে অনেক বড় লড়াই জেতা যায়, দেখিয়ে দিয়েছিল এভার রেডি। ঝড় হোক ঝঞ্ঝা হোক ওরা সবসময়ে তৈরিই ছিল।

ডায়মন্ড হারবারের ফুটবল-ছটা ফিরিয়ে দিল কুড়ি বছর আগের এক অধ্যায়। 

আরও পড়ুন: 'ওজন কমে গিয়েছিল, দৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল ঝাপসা', এই রোগ কাবু করে দিয়েছিল আক্রমকে, তবুও বলকে কথা বলাতেন