আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে সাফল্য আসবে?‌ হারতে হারতে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সদ্য একদিনের সিরিজ জিতলেও ওয়েস্ট ইন্ডি‌জ ক্রিকেটের সামগ্রিক চিত্রটা মোটেও ভাল নয়। টাকার জন্য একের পর এক ক্রিকেটার হয় দেশের হয়ে খেলতে চাইছেন না, অথবা অবসর নিচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে টেস্টে ২৭ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর সমস্যার সমাধান খুঁজতে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের সাহায্য চেয়েছিল সে দেশের বোর্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থা দেখে বিস্মিত প্রাক্তনরাও।


ব্রায়ান লারার মতে, তাঁরা বাকি দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার যোগ্যই নন। ক্লাইভ লয়েড চাইছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের অতীত গরিমার কথা মাথায় রেখে আরও বেশি অর্থসাহায্য করুক আইসিসি। বৈঠকে ছিলেন ভিভ রিচার্ডস, ডেসমন্ড হেনেস, শিবনারায়ণ চন্দ্রপল এবং কোচ ড্যারেন স্যামিও।


এটা ঘটনা, ১৯৭৫ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ক্রিকেটবিশ্বে অপ্রতিরোধ্য দল ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে এখনকার সঙ্গে সেই দলকে মেলানো যাবে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আর্থিক অবস্থা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। অর্থের নয়ছয় করা হয়েছে। প্রশাসনিক কাজকর্মও ঠিক নেই। দেশের হয়ে খেলে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই উঠতি ক্রিকেটাররা টি–টোয়েন্টি লিগের অর্থের হাতছানিতে সাড়া দিচ্ছেন।


রিভিউ মিটিংয়ে যা উঠেছে তাতে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের দূরবস্থার জন্য চারটি কারণ উঠে এসেছে। প্রথমত ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থা ভাল নয়। সক্রিয়তার অভাব, স্বল্পমেয়াদি ভাবনাচিন্তা এবং প্রশ্ন ওঠার মতো আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্রিকেটারদের চুক্তি নিয়ে আগ্রহ দেখানো হয়নি, অর্থ দিতে দেরি করা হয়েছে। ক্রিকেটাররা বিশ্বাসই হারিয়ে ফেলেছেন। দ্বিতীয়ত ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের ঠান্ডা যুদ্ধ লেগেই রয়েছে। বোর্ডকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারেন না তারা। ২০১৪–য় বেতন না দেওয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে সফরের মাঝপথেই দেশে ফিরে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। তৃতীয়ত আইপিএল এবং তার পর বিশ্বজু়ড়ে টি–টোয়েন্টি লিগ খেললে যে অর্থ রোজগার করা যায় তা এড়ানো অসম্ভব। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা আর দেশের হয়ে খেলাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। চতুর্থত, ঘরোয়া এবং জুনিয়র ক্রিকেটের অবস্থা শোচনীয়। ক্রিকেট খেলার জন্য কাউকে অনুপ্রাণিত করা যাচ্ছে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব দ্বীপরাষ্ট্রেই এক অবস্থা।


তবে শেষ কারণটা নিয়েই বেশি চিন্তিত লারা। বৈঠকে বলেছেন, ‘‌আগে দক্ষতার নিরিখে দল তৈরি হত। আমরা বিশ্বের সেরা দল হয়েছিলাম। তার পর থেকে খেলাটা অনেক বদলে গিয়েছে। তাই প্রতিভা তুলে আনতে নতুন পন্থা নিতে হবে আমাদের। বাকি দেশগুলো আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এখনও দক্ষতা রয়েছে দেশের ক্রিকেটে। তা কাজে লাগানো হচ্ছে না।’‌ লারার মতে, এই অবস্থা সারতে অনেক সময় লাগবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলা এখন আর ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করতে পারছে না। কী ভাবে তাদের অনুপ্রাণিত করা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতি দায়বদ্ধতা ফিরিয়ে আনা যায় সেটা খুঁজে বার করতে হবে। এ ব্যাপারে ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার থেকে শিখতে এবং সাহায্য নিতে বলেছেন তিনি।


বিশ্বজয়ী অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের মতে, আর্থিক সমস্যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের পতনের একটা মূল কারণ। তাই তিনি চান, পুরনো গৌরবের কথা মাথায় রেখে আইসিসি–র উচিত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেশি অর্থ সাহায্য করা।