আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১২ লিভ-ইন যুগলকে অবিলম্বে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য গুজরাট পুলিশকে নির্দেশ দিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। বিচারপতি বিবেক কুমার সিং জানিয়েছেন, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও লিভ-ইনে থাকা যুগলদের অবৈধ বলা যাবে না, কারণ এটা কোনও অপরাধ নয়। 

ওই যুগলরা অভিযোগ করেছিলেন যে, নিজেদের পরিবারের তরফেই তাঁরা হুমকি পাচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত তাঁরা। পুলিশে অভিযোগ করলেও কোনও কাজ হয়নি, পুলিশ নিষ্ক্রিয়। শুনানিতে আদালত জোর দিয়ে বলেছে যে, আনুষ্ঠানিক বিয়ে না হলেও কোনও ব্যক্তির জীবনের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করা যায় না।

বিচারপতি বিবেক কুমার সিং, সবকটি পিটিশন একসঙ্গে শুনেছেন, রায় দিয়েছেন যে লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা প্রাপ্তবয়স্করা সংবিধান অনুযায়ী জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী। বার অ্যান্ড বেঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি এই ধরনের পিটিশনের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে যুগলরা অভিযোগ করছেন যে- স্থানীয় পুলিশ তাঁদের অভিযোগে কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

আদালত বলেছে, "নাগরিক নাবালক বা প্রাপ্তবয়স্ক, বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হোক না কেন, মানবিক জীবনের অধিকারকে অনেক উচ্চতর আসনে স্থাপন করতে হবে। শুধুমাত্র আবেদনকারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেননি, এই কারণে তাঁরা ভারতের নাগরিক হিসেবে ভারতের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না।" আদালত এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে যে, আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে না হলে, কোনও ব্যক্তি বা যুগলের সাংবিধানিক সুরক্ষা দুর্বল হয়।

সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী রায়ের কথা উল্লেখ করে বিচারপতি সিং বলেন, সঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং সেই পছন্দে যেকোনও হস্তক্ষেপ সাংবিধানিক স্বাধীনতার লঙ্ঘন।

বিচারক স্পষ্ট করেছেন যে, আদালত লিভ-ইন সম্পর্কের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা করছে না, বরং এই সাংবিধানিক প্রশ্নটি বিবেচনা করছে যে- একসঙ্গে বসবাস করতে ইচ্ছুক প্রাপ্তবয়স্করা আইন দ্বারা সুরক্ষিত কিনা। তিনি উল্লেখ করেন যে, সামাজিক বা ব্যক্তিগত নৈতিকতার পার্থক্যের বৈধতা প্রভাবিত হয় না এবং লিভ-ইন সম্পর্ক আইনত নিষিদ্ধ নয়।

প্রাপ্তবয়স্কদের স্বশাসনের ওপর জোর দিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলেছে, "একবার কোনও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গী বেছে নিলে, অন্য কোনও ব্যক্তির, সে পরিবারের সদস্যই হোক না কেন, তাদের শান্তিপূর্ণ অস্তিত্বে আপত্তি জানানোর বা বাধা সৃষ্টি করার কোনও অধিকার নেই।"

রাষ্ট্রের দায়িত্বের ওপর জোর দিয়ে আদালত বলেছে, প্রতিটি নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষা করা কর্তৃপক্ষের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বেঞ্চ বলেছে, "সংবিধান আরোপিত বাধ্যবাধকতা অনুসারে প্রতিটি নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষা করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।"

আদালত গার্হস্থ্য হিংসা থেকে নারীদের সুরক্ষা আইনের কথাও উল্লেখ করেছে এবং বলেছে যে- এই আইনটি বিবাহবহির্ভূত সহবাসকে স্বীকৃতি দেয় এবং বিয়েকে বাধ্যতামূলক না করেই গার্হস্থ্য সম্পর্কে থাকা নারীদের আইনি প্রতিকার প্রদান করে। ১২টি পিটিশনই মঞ্জুর করে আদালত পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যুগলরা প্রাপ্তবয়স্ক এবং স্বেচ্ছায় একসঙ্গে বসবাস করছেন—এই বিষয়টি যাচাই করার পর যেন তাদের অবিলম্বে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। আবেদনকারীদের আদেশের একটি অনুলিপি-সহ পুলিশ কমিশনার, সিনিয়র পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপারের কাছে যাওয়ার অনুমতি মঞ্জুর করা হয়েছে।