আজকাল ওয়েবডেস্ক: সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গর্গ। সেই দুর্ঘটনাই কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ। সমুদ্র থেকে গায়ককে উদ্ধার করে সিঙ্গাপুর পুলিশ। নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টা নাগাদ ঘটেছে দুর্ঘটনা। গায়কের মৃত্যুর পরেই প্রশ্ন উঠছে কতটা সুরক্ষিত স্কুবা ডাইভিং। যারা এই ধরণের অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসেন তাঁদের কোন কোন সতর্কতা অবলম্বণ করা প্রয়োজন? আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা সেই সব তথ্য।
স্কুবা ডাইভিং হল সমুদ্রের গভীর জগৎ অন্বেষণের এক অসাধারণ অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস। ‘স্কুবা’ শব্দটি এসেছে Self-Contained Underwater Breathing Apparatus থেকে। এই স্পোর্টসে ডাইভাররা জলের নীচে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে শ্বাস নেন। রোমাঞ্চপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হলেও সঠিক প্রক্রিয়া ও নির্দেশ না মানলে এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
আরও পড়ুন: একটা গানই বদলে গিয়েছিল জীবন, সেই জুবিনকে হারিয়ে কী বলছেন পরিচালক রাজ?
স্কুবা ডাইভিং শিখতে কী কী করণীয়
স্কুবা ডাইভিংয়ের প্রথম ধাপ হল প্রশিক্ষণ। সাধারণত, অনুমোদিত ডাইভিং সেন্টার থেকে প্রাথমিক ও উন্নত কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকে সরঞ্জাম ব্যবহার, জলের নীচে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের প্রশিক্ষণ, শ্বাস নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি পরিস্থিতিতে কী কী করণীয় তা শেখা অত্যন্ত জরুরি।
ডাইভিং শুরু করার আগে ডাইভারদের সরঞ্জাম পরীক্ষা করতে হয়। সেই সব সরঞ্জামের মধ্যে থাকে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক, রেগুলেটর (শ্বাস নেওয়ার যন্ত্র), বুয়্যোন্সি কন্ট্রোল ডিভাইস (জলের নীচে ভেসে থাকা নিয়ন্ত্রণ), ওয়েটস্যুট বা ড্রাইস্যুট, মাস্ক এবং ফিন। ডাইভ শুরু হলে ধীরে ধীরে গভীরে নামতে হয় যাতে শরীর জলের চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। জলের নীচে যোগাযোগ হাতের সঙ্কেতের মাধ্যমে করা হয়। নির্ধারিত সময় ও গভীরতা মেনে ডাইভিং শেষ হলে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয়, যাতে শরীরের ভিতরে জমে থাকা নাইট্রোজেন নিরাপদে বের হতে পারে এবং ডিকম্প্রেশন সিকনেস এড়ানো যায়।

স্কুবা ডাইভিংয়ে কয়েকটি বড় ঝুঁকি রয়েছে-
- ডিকম্প্রেশন সিকনেস: জলের তলা থেকে দ্রুত উপরে উঠে এলে শরীরে গ্যাস বুদবুদ তৈরি হয়ে ব্যথা, অঙ্গ বিকল বা এমনকি মৃত্যু ঘটাতে পারে।
- ব্যারোট্রমা: হঠাৎ চাপ পরিবর্তনে কান বা ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- অক্সিজেন সরবরাহের সমস্যা: রেগুলেটর বা সিলিন্ডারের ত্রুটি বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
- সামুদ্রিক প্রাণীর আক্রমণ: কিছু প্রাণী যেমন জেলিফিশ বা স্টিং-রে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
- স্রোতের তীব্রতা বা পথ হারানো: অভিজ্ঞতা কম হলে ডাইভার স্রোতের কারণে বিপদে পড়তে পারে।
প্রাণের ঝুঁকি কমাতে কিছু নিরাপত্তা প্রোটোকল কঠোরভাবে মানা উচিত-
- প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন: অনুমোদিত সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেট ছাড়া ডাইভিং না করা।
- ডাইভ সঙ্গী: কখনও একা ডাইভ না করা। সবসময় একজন সঙ্গী রাখতেই হবে।
- সরঞ্জাম পরীক্ষা: প্রতি বার ডাইভের আগে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও রেগুলেটর পরীক্ষা করা।
- ডাইভ পরিকল্পনা: গভীরতা, সময় ও স্রোতের দিক সম্পর্কে স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
- ধীরে উপরে উঠতে হবে: ডিকম্প্রেশন সিকনেস এড়াতে পর্যাপ্ত বিরতি বজায় রেখে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হবে।
- শরীরিক সুস্থতা: ডাইভিংয়ের আগে মদ্যপান বা ভারী খাবার না খাওয়া এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা প্রয়োজনীয়।
স্কুবা ডাইভিং একটি অসাধারণ অ্যাডভেঞ্চার, যা সমুদ্রের গোপন সৌন্দর্য উন্মোচন করে। তবে এটি নিরাপদে উপভোগ করতে হলে সঠিক প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তা প্রোটোকল মেনে চলা অপরিহার্য। সঠিক প্রস্তুতি ও নিয়ম মেনে চললে স্কুবা ডাইভিং রোমাঞ্চ বাড়িয়ে দেয় বেশ কয়েক গুণ।
