আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর ক্যারোলিনার বাসিন্দা মাইকেল ফিলিপস নিজেকে “বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পুরুষাঙ্গের অধিকারী” বলে দাবি করে দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে হইচই ফেলে দিয়েছেন নেট পাড়ায়। তাঁর উদ্দেশ্য আত্মপ্রচার নয়, বরং এমন পুরুষদের পাশে দাঁড়ানো, যাঁরা একই শারীরিক অবস্থার কারণে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
মাইকেল জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর 'আকার' গড় পুরুষদের থেকে আলাদা। তবে সময়ের সঙ্গে আকারে কোনও পরিবর্তন আসবে, এই আশা তিনি দীর্ঘদিন ধরে মনে মনে পুষে রেখেছিলেন। বাস্তবে তা কখনওই হয়নি। বর্তমানে তিনি যে শারীরিক অবস্থার মধ্যে রয়েছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে বলা হয় ‘মাইক্রো পেনিস’।
এক সাক্ষাৎকারে মাইকেল স্বীকার করেন, “আমি এখনও পুরোপুরি মেনে নিতে পারিনি যে আমার একটি মাইক্রো পেনিস আছে।” তবে তিনি এটাও জানান, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে তিনি হাসি-ঠাট্টাকেই অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন। “গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম ওঠার কথা মজা করে বলতে গিয়েই আমার মনে হল হয়তো সত্যিই আমারটাই সবচেয়ে ছোট। যদি তাতে সচেতনতা বাড়ে, তাহলে আমি আপত্তি করব না,” বলেন তিনি।
ইনস্টাগ্রামে নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার পর যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন, তা তাঁকে আশাবাদী করেছে। তাঁর কথায়, অধিকাংশ মানুষই সহানুভূতিশীল ও মানবিক আচরণ করেছেন। মাইকেলের মতে, সমাজে পুরুষাঙ্গের আকার নিয়ে যে অবাস্তব ও মনগড়া ধারণা রয়েছে, তা পুরুষদের উপর প্রবল মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। “মিডিয়ায় 'ছোট' আকারের কোনও বাস্তব প্রতিনিধিত্ব নেই। ‘মাইক্রো পেনিস’ শব্দটাকে প্রায়ই রসিকতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এটি যে একটি প্রকৃত চিকিৎসা-সংক্রান্ত অবস্থা, তা প্রায় কেউই জানে না,” বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইন-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের গড় পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য শিথিল অবস্থায় প্রায় ৩.৬১ ইঞ্চি (৯.১৭ সেন্টিমিটার) এবং উত্তেজিত অবস্থায় ৫.১৬ ইঞ্চি (১৩.১ সেন্টিমিটার)। কিন্তু মাইকেলের দাবি, তাঁর পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চিরও কম।
এই শারীরিক অবস্থার কারণে তাঁর জীবনে গভীর মানসিক প্রভাব পড়েছে। স্কুলজীবনে একবার এক মেয়ের হাতে বিদ্রুপের শিকার হওয়ার ঘটনা আজও তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। সেই অভিজ্ঞতার পর থেকেই তিনি ডেটিং ও সম্পর্কের বিষয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন।
“সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং এই বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা। লজ্জার কারণে আমি এখনও যৌনতা করিনি,” বলেন মাইকেল।
তিনি মনে করেন, সমাজের সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা হল ছোট পুরুষাঙ্গ মানেই তা কেবল আকারগত বৈচিত্র্য, এর পেছনে যে চিকিৎসা-সংক্রান্ত কারণ থাকতে পারে, তা অনেকে ভাবেনই না। “মানুষকে জানতে হবে, ‘মাইক্রো পেনিস’ নামে একটি স্বীকৃত চিকিৎসা-অবস্থা রয়েছে,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।
চিকিৎসকদের মতে, মাইক্রো পেনিস মূলত ভ্রূণ অবস্থায় টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে খুব অল্প বয়সে হরমোন চিকিৎসার মাধ্যমে বৃদ্ধি আংশিকভাবে বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। তবে সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ থাকলেও সাধারণভাবে তিন ইঞ্চির কম দৈর্ঘ্যের পুরুষাঙ্গকে মাইক্রো পেনিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
লজ্জা ও নীরবতার সংস্কৃতি ভেঙে মাইকেল ফিলিপস এখন চাইছেন আলোচনার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে যাতে ভবিষ্যতে এমন শারীরিক বৈচিত্র্য নিয়ে বেড়ে ওঠা পুরুষদের আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাস ধ্বংস না হয়।
