আজকাল ওয়েবডেস্ক: কিছু ধরেই জাঁকিয়ে বসেছে কাশিটা। হাজার টোটকাতেও থামছেই না। এক-দু’দিন নয় টানা সপ্তাহ দুয়েক ধরে চলছে তো চলছেই। সঙ্গে মাঝে মাঝে বুকে চাপ, নিঃশ্বাসে টান। ভাবছেন ঠান্ডা লেগেছে অথবা সামান্য অ্যালার্জি? ব্যাস নিজেই ডাক্তারি করে বাড়িতে বসে রইলেন। এই ভুলটাই আজও করে চলেছেন বহু মানুষ। আর তাতেই বিপদ ঘনীভূত হচ্ছে চুপিচুপি। শেষে যখন আসল রোগ ধরা পড়ছে, তখন আর কিছুই করার নেই। কিছুটা এভাবেই আক্রমণ করে ফুসফুসের ক্যানসার।
এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতেই আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড লাং ক্যানসার ডে’। দুঃখের বিষয় এখনও ভারতের একটি বড় অংশের মানুষ জানেন না, ফুসফুসের ক্যানসার ঠিক কীভাবে ধরা দেয় শরীরে। প্রতি বছর ভারতে প্রায় ৮১,৭০০ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুর সংখ্যাও ভয়াবহ। বছরে প্রায় ৭৫,০০০ জন। আর এই সংখ্যাটা প্রতি বছরই বাড়ছে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ চিকিৎসকেরা বারবার একই কথা জানাচ্ছেন। সময় থাকতেই সাবধান হলে অনেকাংশেই ঠেকানো সম্ভব এই বিপদ। তার জন্য জেনে রাখা দরকার এই ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ কী কী?
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
১. কাশি যাচ্ছে না?
যদি কাশি টানা সাত দিন বা তার বেশি সময় ধরে থাকে, আর কোনও ওষুধে তেমন কাজ না করে, তবে সেটি সাধারণ কাশি নাও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লাং ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ এটি। একে ‘সাইলেন্ট ক্যানসার’ বলার অন্যতম কারণই হল, কাশি ছাড়া কোনও বড় উপসর্গ শুরুতে দেখা যায় না। তাই কাশি পুষে রাখবেন না। অবহেলা না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।
২. কাশির সঙ্গে রক্ত উঠছে?
চোট আঘাত ছাড়া রক্তপাত হওয়া সবসময় খারাপ লক্ষণ। আর কাশির সঙ্গে যদি কখনও রক্ত আসে, তাহলে তো কথাই নেই। একটুও অবহেলা করা ঠিক নয়। চিকিৎসকদের মতে, লাং ক্যানসারের একেবারে ক্লাসিক উপসর্গ কাশির সঙ্গে রক্তপাত। বিশেষত যাঁরা ধূমপায়ী, তাঁদের এই লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই চেকআপ করা জরুরি।

৩. দম ফুরিয়ে যাচ্ছে?
আগে যে কাজ করতে কোনও সমস্যা হত না, হঠাৎ সেটাই করতে গিয়ে দম ফুরিয়ে যাচ্ছে? সিঁড়ি উঠতে কষ্ট হচ্ছে? হেঁটে ১০ মিনিট গেলেই হাঁপিয়ে পড়ছেন? এর অর্থ ফুসফুস ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। ফুসফুস ঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহ না করতে পারলে শরীর এমনভাবেই ইঙ্গিত দেয়। অনেক সময় এই উপসর্গকে হৃদরোগ বলে ভুলও করেন অনেকে। কী থেকে এমন হচ্ছে, সঠিক বলতে পারবেন চিকিৎসকরাই।

৪. বুকে বা কাঁধে ব্যথা
ফুসফুসের আশপাশে থাকা স্নায়ু বা হাড়ে যদি ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে বুকে গভীর ব্যথা, অথবা কাঁধের দিকে টান লাগার মতো যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও গলা ধরে আসে। আবার সেই গলা পরিষ্কার করতে গেলেও ব্যথা বাড়ে। এমনকী হাসলে বা কাশলেও অস্বস্তি হয়।

৫. গলার স্বরে বদল
গলার যে অংশ থেকে স্বর উৎপন্ন হয় তাকে ভোকাল কর্ড বলে। অনেক সময় ফুসফুসের ক্যানসারে এই ভোকাল কর্ডের উপরেও চাপ পড়ে। সেক্ষেত্রে গলার স্বরে পরিবর্তন আসে। অনেক সময় গলা বসে যেতে পারে, কণ্ঠস্বর ভারী বা খসখসে হয়ে যায়। যাঁরা নিয়মিত গান করেন বা বক্তৃতা দেন তাঁদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ বেশি চোখে পড়ে।

কাদের ঝুঁকি বেশি?
ধূমপায়ী তো বটেই। পাশাপাশি যাঁরা দূষণের মধ্যে কাজ করেন, যেমন- কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার, কারখানার শ্রমিক, কাঠের গুঁড়ো বা ধোঁয়ার মধ্যে কাজ করা শ্রমিক, তাঁদের ঝুঁকিও অনেকটাই বেশি। অনেকেই ভাবেন ধূমপান না করলে এই রোগ হতে পারে না। কিন্তু জানলে চমক লাগতে পারে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ২০% লাং ক্যানসার রোগী কখনও ধূমপানই করেননি। ফলে শুধু সিগারেট নয়, বায়ু দূষণ, রান্নার ধোঁয়া, প্যাসিভ স্মোকিংও এই রোগের বড় কারণ।

কী করণীয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা উচ্চ ঝুঁকি খুবই বেশি (যেমন দীর্ঘদিনের ধূমপায়ী বা দূষণের মধ্যে থাকেন) তাঁদের বছরে একবার লো-ডোজ সিটি স্ক্যান করানো উচিত। কারণ অনেক সময় শুরুতে রোগ শরীরে বাসা বাঁধলেও কোনও উপসর্গ দেখা দেয় না। কিন্তু এই অবস্থায় দ্রুত ধরা পড়লে চিকিৎসাতে সাফল্য মেলে।
লাং ক্যানসারকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। কারণ, এটি প্রাথমিক পর্যায়ে খুব নিঃশব্দে আসে অথচ একবার ছড়িয়ে পড়লে থামানো কঠিন। তাই আজকের এই দিনে সতর্ক হন, কাশি, বুকে ব্যথা, নিঃশ্বাসে টান বা গলা বসে যাওয়ার মতো সাধারণ উপসর্গ কেও অবহেলা করবেন না। সচেতন হন, পরীক্ষা করান, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।