আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেমে পড়া কেবল হৃদয়ের ব্যাপার নয়, তা মস্তিষ্ককেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেমে থাকাকালীন সময়ে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর পেছনে কাজ করে মস্তিষ্কের নানা রাসায়নিক পরিবর্তন ও আবেগঘন মানসিক অবস্থা।

গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রেমে পড়ার সময় মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক রাসায়নিকের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি একটি ‘ফিল গুড’ নিউরোট্রান্সমিটার, যা আনন্দ ও তৃপ্তির অনুভূতি জাগায়। ডোপামিনের প্রভাবে প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরের প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হয়ে পড়েন যে, তারা প্রায়শই বাস্তব পরিস্থিতি বা ভবিষ্যতের ঝুঁকির কথা উপেক্ষা করে ফেলেন।

কমে যায় প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের কার্যকারিতা

মস্তিষ্কের সামনের অংশে অবস্থিত প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স যুক্তি, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্র। প্রেমের প্রবল আবেগ এই অংশের কার্যকারিতা হ্রাস করে দেয়, যার ফলে মানুষ অনেক সময়ই অসংগতিপূর্ণ বা আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত নেয়।

আবেগ বনাম যুক্তি

গবেষকরা বলছেন, প্রেমে পড়ার সময় যুক্তির চেয়ে আবেগ বেশি কাজ করে। এর ফলে অনেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেন যা হয়তো বাস্তব পরিস্থিতিতে উপযুক্ত নয়, কিন্তু সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার জন্য আবেগের তাড়নায় তা গ্রহণ করেন।

‘টানেল ভিশন’ ও নিশ্চিতকরণ প্রবণতা

গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রেম মানুষকে ‘টানেল ভিশন’-এর মধ্যে ফেলে দেয়, অর্থাৎ তাদের দৃষ্টি সীমিত হয়ে যায় শুধুমাত্র সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলিতে। পাশাপাশি, নিশ্চিতকরণ প্রবণতার কারণে প্রেমিক-প্রেমিকারা এমন তথ্যকেই গুরুত্ব দেন যা তাদের অনুভূতিকে সমর্থন করে, বিরুদ্ধ তথ্য এড়িয়ে যান।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেমে আবেগ থাকবেই—তবে নিজের যুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে সচেতনভাবে সক্রিয় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে। এই গবেষণাটি আবারও প্রমাণ করে, প্রেম শুধু কবিতার বিষয় নয়—এটি একটি জটিল নিউরোসাইকোলজিক্যাল অবস্থা, যা হৃদয়ের পাশাপাশি মাথাকেও গভীরভাবে নাড়া দেয়।