আজকাল ওয়েবডেস্ক: টি-শার্ট আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিশু থেকে বয়স্ক, পুরুষ থেকে নারী—প্রায় সবার পোশাকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এটি। হালকা, আরামদায়ক এবং সহজে পরার উপযোগী হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে। তবে কি কখনও ভেবে দেখেছেন, ‘টি-শার্ট’-এর ‘টি’ আসলে কী বোঝায়?
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, টি-শার্ট বিশ্বের সবচেয়ে সহজ পোশাকগুলির একটি। এতে কলার থাকে না, হাতা সোজাসাপ্টা এবং গায়ের সঙ্গে মিশে যায় এমন একধরনের কাটিং। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো—যখন এই পোশাকটিকে সমতলভাবে রাখা হয়, তখন এর আকার ইংরেজি অক্ষর ‘T’-এর মতো দেখতে লাগে। সেই থেকেই এর নাম হয় ‘T-shirt’।
তবে এটিই একমাত্র ব্যাখ্যা নয়। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান-এর তথ্যমতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সেনারা প্রশিক্ষণকালীন সময়ে হালকা ও আরামদায়ক এক ধরনের শার্ট পরতেন। এগুলিকে শুরুতে বলা হতো ‘Training Shirt’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংক্ষেপে তা ‘T-shirt’ নামে পরিচিত হয়ে যায়।
আজ আমরা যে পোশাকটি অনায়াসে পরে নিই, তার নামের পেছনে এমন আকর্ষণীয় গল্প লুকিয়ে আছে তা অনেকেরই জানা নেই। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের প্রতিদিনের অনেক পোশাকেরই রয়েছে চমকপ্রদ ইতিহাস। শুরুটা যেভাবেই হোক না কেন, আজ টি-শার্ট কেবল সাধারণ পোশাক নয়, বরং একটি বৈশ্বিক ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। খেলাধুলা থেকে অফিস, বাড়ি থেকে আড্ডা—সবখানেই মানানসই এই পোশাক। নামকরণের পেছনের ইতিহাস যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি এর জনপ্রিয়তাও দিন দিন বহুগুণে বেড়েছে।
কাপড় শুধু শরীর ঢাকার উপায় নয়, বরং সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। মানবসভ্যতার শুরু থেকেই পোশাক সমাজের পরিচয়, পরিবেশ ও মূল্যবোধের সঙ্গে যুক্ত। ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, ধর্মীয় রীতি ও সামাজিক প্রথা অনুযায়ী পোশাকের ধরন গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের শাড়ি, কুর্তা বা পাঞ্জাবি শুধু পোশাক নয়, বরং ঐতিহ্যের বাহক। আবার পশ্চিমে স্যুট-টাই আধুনিকতা ও পেশাদারিত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
কাপড় সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতা প্রকাশ করে। উৎসব, বিয়ে, কিংবা শোকের মুহূর্ত—প্রতিটি সামাজিক অবস্থায় নির্দিষ্ট পোশাকের ব্যবহার দেখা যায়। পাশাপাশি, গ্লোবালাইজেশনের যুগে পোশাক এক সংস্কৃতি থেকে অন্য সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। যেমন টি-শার্ট বা জিনস আজ বিশ্বব্যাপী সাধারণ পোশাক হলেও, এতে ব্যক্তিগত পরিচয় ও বার্তাও প্রকাশ পায়। অতএব, কাপড় মানুষের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি সমাজ, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের প্রতিফলন ঘটায়। এটি কেবল ফ্যাশন নয়, ইতিহাস ও সংস্কৃতির জীবন্ত ভাষা।
