আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কম্পিউটারের পর্দার দিকে তাকিয়ে একভাবে বসে কাজ। আধুনিক কর্পোরেট জীবনের এই ছবিটা প্রায় সকলেরই চেনা। ঘাড়, পিঠ বা কোমরের ব্যথা এখন অনেক অফিসকর্মীরই দৈনন্দিন সঙ্গী হয়ে উঠেছে। অনেকেই এই ধরনের ব্যথাকে সামান্য ক্লান্তি বা কাজের চাপ বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই উপসর্গগুলি আসলে একটি গুরুতর সমস্যার সঙ্কেত, যার নাম ‘অফিস সিনড্রোম’। বিশেষত কোভিড-পরবর্তী সময়ে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সংস্কৃতিতে বাড়িতে সঠিক পরিকাঠামোর অভাবে এই সমস্যা আরও বেড়েছে।

অফিস সিনড্রোম ঠিক কী?
এটি নির্দিষ্ট কোনও রোগ নয়, বরং দীর্ঘক্ষণ ধরে অস্বাস্থ্যকর ভঙ্গিতে বসে কাজ করার ফলে তৈরি হওয়া একাধিক শারীরিক সমস্যার একটি সমষ্টি। মূলত পেশি এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর এর প্রভাব পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে কম্পিউটারের সামনে ঝুঁকে কাজ করার ফলে শরীরের বিভিন্ন পেশি শক্ত বা অনমনীয় হয়ে যায় এবং মেরুদণ্ডের উপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হয়। এর থেকেই জন্ম নেয় একগুচ্ছ সমস্যা।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই

এর প্রধান লক্ষণগুলি কী কী?
অফিস সিনড্রোমের লক্ষণগুলি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে কয়েকটি সাধারণ উপসর্গ প্রায় সকলের মধ্যেই দেখা যায়।
ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা: এটি সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। অনেক সময় এই ব্যথা কাঁধ থেকে বাহু পর্যন্তও ছড়িয়ে পড়ে।
মাথাব্যথা: একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখে চাপ পড়ে এবং ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়ে গিয়ে মাথাব্যথা, এমনকি মাইগ্রেনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কোমরে যন্ত্রণা: দীর্ঘক্ষণ ভুল ভঙ্গিতে বসে থাকার ফলে কোমরের নীচের অংশে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
কব্জি ও আঙুলে ব্যথা: একটানা কি-বোর্ড ও মাউস ব্যবহারের ফলে কব্জিতে ব্যথা বা কারপাল টানেল সিনড্রোমের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
চোখের সমস্যা: চোখ জ্বালা করা, চোখ দিয়ে জল পড়া বা চোখ শুকিয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গও এর অন্তর্ভুক্ত।
হাতে-পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরা: অনেক সময় স্নায়ুর উপর চাপ পড়ার কারণে হাতে বা পায়ে অবশ বোধ বা ঝিঁ ঝিঁ ধরার অনুভূতি হতে পারে।

কেন হয় এই সমস্যা?
এর পিছনে প্রধানত চারটি কারণ দায়ী। প্রথমত, ভুল শারীরিক ভঙ্গি; বিশেষ করে কম্পিউটারের দিকে ঝুঁকে কাজ করার ফলে ‘টেক নেক’ তৈরি হয়, যা ঘাড় এবং শিরদাঁড়ার উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘক্ষণ গতিহীন থাকা, যার ফলে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং পেশি শক্ত হয়ে যায়। তৃতীয়ত, চেয়ার বা ডেস্কের উচ্চতা সঠিক না থাকা। চতুর্থত, মানসিক চাপ, যা আমাদের ঘাড় ও কাঁধের পেশিগুলিকে শক্ত করে তোলে এবং ব্যথা বাড়ায়।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই

প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনশৈলীতে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সঠিক ভঙ্গিতে বসা: চেয়ারে বসার সময় কোমর সোজা রাখুন। কম্পিউটার মনিটর যেন চোখের সোজাসুজি থাকে, যাতে ঘাড় ঝুঁকাতে না হয়। পা দুটি মাটিতে সমানভাবে রাখুন।
নিয়মিত বিরতি: প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য চেয়ার থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন। চোখের আরামের জন্য ‘২০-২০-২০’ নিয়ম মেনে চলুন। অর্থাৎ, প্রতি ২০ মিনিট অন্তর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে ২০ ফুট দূরের কোনও বস্তুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন।
সাধারণ ব্যায়াম: কাজের ফাঁকেই ঘাড় বা কাঁধ ঘোরানোর মতো হালকা ব্যায়াম করুন। হাত ও পায়ের পাতা ঘোরানো বা সহজ স্ট্রেচিং পেশিকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
কাজের বাইরে জীবনশৈলী: সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন হালকা ব্যায়াম, যোগাসন বা সাঁতারের অভ্যাস করুন। এটি পেশিকে সচল ও শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ঘুম এবং প্রদাহনাশক খাবার, যেমন ফল ও সবুজ শাকসবজি, খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন: ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সহ্যের বাইরে চলে যায়, তবে অবহেলা না করে অবশ্যই ফিজিওথেরাপিস্ট বা অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে নিয়ে এসেছে নতুন কিছু স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ। এই ‘অফিস সিনড্রোম’ তারই অন্যতম উদাহরণ। তাই শরীরের ছোট ছোট সঙ্কেতকে অবহেলা না করে, সচেতন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, নাহলে এই সমস্যা ভবিষ্যতে বড় কোনও রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।