আজকাল ওয়েবডেস্ক: কথায় বলে, ধূমপান ছাড়া এতটাই ‘সহজ’ যে একজন মানুষ জীবনে বহুবার ধূমপান ছাড়েন! অনেক ধূমপায়ীদের মতে, শরীরে ধূমপানের ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব নয়। আবার কয়েকটা সিগারেট খেলে তেমন ক্ষতি হয় না, এমন ধারণাতেও বিশ্বাসীও অনেকে। কিন্তু এসব শুধুই মনের কল্পনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে একটি সিগারেট খেলেও তা হার্ট এবং ফুসফুসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু সুখবর হল, আপনি যে মুহুর্তে ধূমপান ছাড়বেন, ঠিক তখন থেকেই শরীরে কয়েকটি পরিবর্তন শুরু হয়।
প্রথম কয়েক ঘণ্টায় কী হয়
ধূমপান ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। হাত ও পায়ের তাপমাত্রাও স্বাভাবিক হয়ে যায়। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ২ ঘন্টা পর ডোপামিন ক্ষরণ আগের চেয়ে কমে গিয়ে কিছু শারীরিক পরিবর্তন ঘটায়। ফলে মুড সুইং, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ধূমপানের ফলে দেহে প্রবেশ করে ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড। আর সেই কার্বন মনোক্সাইড ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার আট ঘণ্টা পর শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। একইসঙ্গে রক্তে অক্সিজেন প্রবেশ করে কার্বনের মাত্রা স্বাভাবিক করে তোলে।
২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় শরীরে পরিবর্তন
ধূমপান ছাড়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শরীরে বেশ লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়। নিকোটিন শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে ব্রঙ্কিয়াল টিউবগুলি শিথিল হয়। মূলত কাশির সঙ্গে ফুসফুসে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়। ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়তে থাকে। এছাড়া করোনারি রক্তনালির রোগের ঝুঁকি কমে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু সুস্থ হতে শুরু করে। ধূমপান শরীরে রক্ত সঞ্চালনে বাধা দেয়। ফলে ত্বক ধীরে ধীরে নিস্তেজ, বিবর্ণ হতে থাকে। আর ধূমপান ছাড়ার পর রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়। ফলে ত্বকের জেল্লা ফিরে আসে।
ধূমপান ছাড়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিরক্তি, উদ্বেগ, মনোযোগে সমস্যা এবং খিদে বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। যদিও প্রাথমিকভাবে সমস্যা হলেও শরীর ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত জল খাওয়া এবং নিকোটিন থেরাপি যেমন প্যাচ অথবা চুইংগামে উপকার পেতে পারেন। একইসঙ্গে পরিবার, বন্ধু, প্রশিক্ষিত কাউন্সেলরের সাহায্যে ধূমপান ছাড়া আরও সহজ হয়ে যায়।
প্রাথমিকভাবে ধূমপান ছাড়ার সময় চ্যালেঞ্জিং হলেও এর দীর্ঘ মেয়াদি উপকারিতা রয়েছে অনেক। কয়েক সপ্তাহ বাদেই শরীরে রক্ত সঞ্চালন, এনার্জি বাড়ে। এক মাসের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমে যায়। ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ১০ বছর পর ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা ৫০%–এর বেশি কমে যায়। এছাড়াও হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কম থাকে।
