আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা হয়তো কখনওই পুরোপুরি দূর হয় না। মনের গভীরে শুধু থেকে যায় কিছু না-বলা কথা, কিছু অসমাপ্ত কথোপকথন। কেমন হত যদি সেই প্রিয় মানুষটির কণ্ঠস্বর আরও একবার শোনা যেত? পুরনো রেকর্ডিং নয়, একেবারে জীবন্ত কথোপকথনের মাধ্যমে? যা ছিল কল্পবিজ্ঞানের পর্যায়ে, তাকেই এ বার বাস্তবে রূপ দিল দুই স্কুলছাত্র। তাদের তৈরি এক যুগান্তকারী কৃত্রিম মেধা বা এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রযুক্তি প্রয়াত প্রিয়জনের কণ্ঠস্বরকে ফিরিয়ে এনে শোকস্তব্ধ মানুষকে মানসিক শান্তির পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটি তৈরি করেছে দুই হাইস্কুল পড়ুয়া, ইথান লিম এবং এডওয়ার্ড জিয়াং। তাদের তৈরি অ্যাপে প্রয়াত ব্যক্তির পুরনো ভয়েস নোট, অডিয়ো রেকর্ডিং বা ভিডিয়োর অংশ আপলোড করলেই এআই সেই কণ্ঠস্বরের সমস্ত বৈশিষ্ট্য- গলার স্বর, কথা বলার ধরন, নিজস্ব বাচনভঙ্গি এবং ব্যক্তিত্বকে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করতে পারবে। এরপর ব্যবহারকারী সেই ‘ভার্চুয়াল কণ্ঠস্বরের’ সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন, ঠিক যেমনটা তিনি তাঁর প্রিয়জনের সঙ্গে বলতেন। নির্মাতাদের মতে, এর উদ্দেশ্য প্রিয়জনের বিকল্প তৈরি করা নয়, বরং শোকাহত একজন মানুষকে একটি সুরক্ষিত পরিসর দেওয়া, যেখানে তিনি নিজের আবেগ প্রকাশ করতে পারবেন এবং না-বলা কথাগুলি বলে মনকে হালকা করতে পারবেন।

এই প্রযুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এতে মানসিক শান্তির খোঁজ পেতে পারেন ব্যবহারকারীরা। ব্যবহারকারী যখন তাঁর পরিচিত কণ্ঠে কথা বলেন, তখন এআই শুধু কথোপকথনই চালায় না, তার নেপথ্যে কাজ করে মনোবিজ্ঞানীদের দ্বারা পরীক্ষিত ‘গ্রিফ রিকভারি’ বা শোক কাটানোর কৌশল। এই কৌশলগুলি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কথোপকথনের মধ্যে গেঁথে দেওয়া হয়েছে, যা ব্যবহারকারীকে অজান্তেই মানসিক যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং পরিস্থিতিকে মেনে নিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এই প্রযুক্তি বন্ধুর মতো শোকাচ্ছন্ন মানুষের পাশে থেকে মানসিক শান্তির পথে নিয়ে যায় তাঁদের। নির্মাতারা জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তির লক্ষ্যই হল, বর্তমান নিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি অতীতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া।
আরও পড়ুন: প্রজনন নিশ্চিত করতে দিনে ৪০ বার সঙ্গম! রাজা ক্লান্ত হলেও জোর করে বাধ্য করেন রানি, কোন রাজ্যের ঘটনা?

ইথান এবং এডওয়ার্ড এই অ্যাপটি তৈরি করেছে একটি স্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে- মানুষের সেবা করা। এটি সম্পূর্ণ অলাভজনক একটি উদ্যোগ, যার একমাত্র উদ্দেশ্য শোক এবং মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। প্রিয়জনের চেনা কণ্ঠস্বরের উষ্ণতার সঙ্গে প্রমাণিত নিরাময় কৌশলকে মিশিয়ে দিয়ে এই প্রযুক্তি এক সহানুভূতিশীল এবং উদ্ভাবনী উপায়ে ব্যবহারকারীদের মানসিক শান্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করছে।

যদিও এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ব্যক্তিকে কোনও ধরনের ডিলিউশিন কিংবা প্রজুক্তি নির্ভরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে কি না, তা নিয়ে ভবিষ্যতে বিতর্ক দানা বাঁধতে পারে। তবে নির্মাতাদের লক্ষ্য কিন্তু স্পষ্ট- তাঁরা কাউকে অতীতে আটকে রাখতে চান না, বরং অতীতকে সুন্দরভাবে বিদায় জানিয়ে বর্তমানে শান্তিতে বাঁচার পথ দেখাতে চান। প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা হয়তো চিরকালীন, কিন্তু সেই যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে এই প্রযুক্তি যদি কিছুটা শান্তির প্রলেপ দিতে পারে, তবে সেটাই হবে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় জয়।