আজকাল ওয়েবডেস্ক: সিগারেটের প্যাকেটের উপর থাকে ক্যানসারের বীভৎস ছবি বা ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর’- এই সতর্কবার্তা। বিষয়টি কমবেশি সকলেরই জানা। ফুসফুসের রোগ বা হৃদপিণ্ডের সমস্যার সঙ্গে ধূমপানের সরাসরি যোগের কথা আমরা হামেশাই শুনি। কিন্তু জানেন কি, হাতের ওই জ্বলন্ত সিগারেট শুধু শ্বাসযন্ত্র বা রক্ত সংবহনতন্ত্র নয়, চোখের দৃষ্টিশক্তিকেও ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারে? সাম্প্রতিক গবেষণা এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে উঠে আসছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধূমপানের ধোঁয়া সরাসরি আঘাত হানছে মানুষের চোখে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ধূমপানের ফলে চোখের একাধিক গুরুতর রোগ হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন’। এটি এমন একটি রোগ যা রেটিনার ম্যাকুলা অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ম্যাকুলার জন্যেই স্পষ্ট এবং কেন্দ্রীভূত দৃষ্টিশক্তি পায় মানুষ। এই রোগে আক্রান্ত হলে বই পড়া, মুখ চেনা বা গাড়ি চালানোর মতো কাজগুলি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। শেষ পরিণতি হতে পারে স্থায়ী অন্ধত্ব। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা ধূমপান করেন না তাঁদের তুলনায় ধূমপায়ীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?

দ্বিতীয় মারাত্মক সমস্যাটি হল ছানি। ধূমপান চোখের লেন্সের স্বচ্ছতা নষ্ট করে দেয়, ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হতে শুরু করে। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক চোখের লেন্সের প্রোটিনের গঠন বদলে দেয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছানি পড়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। চিকিৎসকদের মতে, যাঁরা ধূমপান করেন না তাঁদের চেয়ে একজন ধূমপায়ীর চোখে অনেক কম বয়সেই ছানি পড়তে পারে।
কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ নয়। ধূমপানের কারণে ইউভিয়াইটিস নামক চোখের একটি প্রদাহজনিত রোগ হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। এই রোগে চোখের মাঝের স্তর, অর্থাৎ ইউভিয়াতে জ্বালা হয়, যা দ্রুত চিকিৎসা না করালে গ্লুকোমা, ছানি এমনকি রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও, ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ধূমপান ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি’-র ঝুঁকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিসের কারণে হওয়া চোখের একটি মারাত্মক রোগ।

কিন্তু কেন এমনটা হয়?
এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা হাজারো বিষাক্ত রাসায়নিক, যেমন নিকোটিন এবং কার্বন মনোক্সাইড, চোখের সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলিকে সঙ্কুচিত করে দেয়। ফলে চোখে রক্ত এবং অক্সিজেন সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে যায়। এর পাশাপাশি, এটি শরীরে এবং চোখে ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ বা জারন চাপ তৈরি করে, যা চোখের কোষগুলোকে দ্রুত নষ্ট করে দেয়।
সুতরাং, ফুসফুস বা হৃদপিণ্ডকে বাঁচানোর পাশাপাশি পৃথিবীকে রঙিন দেখার ক্ষমতাকে সুরক্ষিত রাখতেও ধূমপান ত্যাগ করা অপরিহার্য। চোখ অমূল্য সম্পদ। সেই সম্পদকে সিগারেটের ধোঁয়ায় চিরতরে হারিয়ে ফেলার আগে আরেকবার ভাবার সময় এসেছে, বক্তব্য চক্ষু বিশারদদের।