আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাজের ধারা অনেক পাল্টে গিয়েছে। অনেকেই এখন সারা দিন ডেস্কে বসে কম্পিউটারের সামনে কাজ করছেন। কিন্তু যাঁরা এই ভাবে সারাদিন কাজ করেন তাঁরা অনেকেই খেয়াল করেছেন যে সন্ধে নাগাদ পায়ের জুতো যেন একটু টাইট লাগে? বাড়ি এসে জুতো মোজা খুললে দেখা যায় পায়ের গোড়ালি আর পাতা ফুলে গেছে অস্বস্তিকর ভাবে। একজন দু’জন নয়, আজকের শহুরে জীবনে দাঁড়িয়ে এটা অতিসাধারণ অথচ উপেক্ষিত একটি সমস্যা। বিজ্ঞানের ভাষা একে বলে- প্রলংগড সিটিং ইডিমা বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে পা ফুলে যাওয়া। চিকিৎসকদের মতে, এই লক্ষণ ভবিষ্যতের বড় স্বাস্থ্য সমস্যারও পূর্বাভাস দিতে পারে

কী কারণে পা ফুলে যায়?
১. দীর্ঘক্ষণ এক ভঙ্গিতে বসে থাকা: অফিসে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা একভাবে বসে থাকেন। এতে পায়ের নীচের অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। শরীরের তরল পদার্থ মাধ্যাকর্ষণের টানে নিচে জমে যায়। ফলে গোঁড়ালি বা পায়ের পাতায় দেখা যায় ফোলা ভাব।
২. রক্তসঞ্চালন ও লিম্ফ নোডের চাপ: ঘনঘন নড়াচড়া না করলে শরীরের লিম্ফ সিস্টেম বা লসিকাতন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে টক্সিন বা অতিরিক্ত তরল জমতে থাকে দেহের নিচের অংশে।
৩. খারাপ বসার ভঙ্গি: হাত-পা গুটিয়ে বা পা ক্রস করে বসার অভ্যাসে শিরায় চাপ পড়ে, যা রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়।
৪. অতিরিক্ত নুন বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া: অফিসের কাজের চাপে অনেককেই বাইরের খাবার খেতে হয়। এতে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। সোডিয়াম শরীরে জল ধরে রাখার প্রবণতা বাড়ায়, যা পা ফোলার অন্যতম কারণ।

কোন কোন ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ?
পা ফুলে থাকার সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা ক্লান্তি থাকে, তবে এটি হৃদযন্ত্র বা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
এক পা ফুলে গেলে এবং পা লাল বা গরম থাকলে তা ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস-এর লক্ষণ হতে পারে।
প্রসবের পর বা দীর্ঘ যাত্রার পর হঠাৎ পা ফোলা দেখা দিলে অবহেলা করবেন না।

আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে

প্রতিকার কী?
১. প্রতি ঘণ্টায় একটু হাঁটুন: চেয়ারে বসে টানা কাজ না করে প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট উঠে হাঁটার চেষ্টা করুন। লিফট নয়, সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
২. ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করুন: পায়ের অ্যাঙ্কল রোটেশন, হিল-টু-টো মুভমেন্টের মতো হালকা ব্যায়াম ডেক্সে বসেই করা যায়। এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
৩. জল খান বেশি করে: অনেকেই ভাবেন জল খেলে ফোলা আরও বাড়বে, আসলে উল্টোটা সত্যি। জল শরীর থেকে টক্সিন বার করতে সাহায্য করে।
৪. লো-সোডিয়াম ডায়েট মেনে চলুন: প্যাকেটজাত স্ন্যাকস কম খান, বাড়িতে তৈরি হালকা খাবারে ভরসা রাখুন।
৫. বসার সময় পা ঝুলে থাকবে না: চেয়ার বা ডেস্ক যদি পায়ের উচ্চতার তুলনায় বেশি উঁচু হয়, তাহলে নিচে একটা ফুটরেস্ট ব্যবহার করুন যাতে পা সমান থাকে।
৬. পা উঁচু করে বিশ্রাম নিন: দিনের শেষে বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ পা উঁচু করে দেওয়ালের দিকে তুলে রাখুন। এতে রক্ত সহজে ওপরের দিকে ফিরে যায়।

চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন?
পা ফোলা যদি নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, ব্যথা বা লালচে ভাব থাকে, কিংবা শরীরের অন্য অংশেও ফোলাভাব দেখা যায়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। বিশেষত, যদি ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা বা হার্টের রোগ আগে থেকে থাকে তাহলে এগুলি বিপদের সঙ্কেত হতে পারে। আজকের কর্পোরেট দুনিয়ায় শরীরের ছোটখাটো অস্বস্তিকে প্রায়শই আমরা অবহেলা করি। অথচ, প্রতিদিন অফিসে বসে কাজ করার ধরনে যদি সামান্য পরিবর্তন আনা যায়, তবে এই পা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।