আজকাল ওয়েবডেস্ক: যৌন মিলনের সময় একে অপরের শরীরে সংক্রমিত ব্যাকটেরিয়াই হয়ে উঠতে পারে যৌন হেনস্থাকারীদের শনাক্ত করার অব্যর্থ অস্ত্র। অস্ট্রেলিয়ার এক সাম্প্রতিক গবেষণা এমনই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। গবেষণাপত্রটি ‘আইসায়েন্স’ নামক বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকদের মতে, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের মতোই প্রতিটি মানুষের যৌনাঙ্গের ব্যাকটেরিয়ার ধরন আলাদা। যৌন মিলনের সময় এই জীবাণু সঙ্গীর দেহে স্থানান্তরিত হয় এবং একটি বিশেষ ‘স্বাক্ষর’ বা চিহ্ন রেখে যায়, যা পরবর্তীকালে চিহ্নিত করা সম্ভব।
মারডক ইউনিভার্সিটির এই গবেষণার প্রধান ডঃ ব্রেন্ডন চ্যাপম্যানের নেতৃত্বে গবেষক দল এই অণুজীব গোষ্ঠীর নাম দিয়েছেন ‘সেক্সোম’। ডঃ চ্যাপম্যান বলেন, “যেসব যৌন হেনস্থার ঘটনায় শুক্রাণু পাওয়া যায় না, যেমন- বীর্যপাত না হলে, কন্ডোমের মতো গর্ভনিরোধক ব্যবহার করা হলে অথবা অভিযুক্ত পুরুষটির ভ্যাসেকটমি করা থাকলে, সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি দোষীকে চিহ্নিত করার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে উঠতে পারে।”
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়া বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, গবেষকরা ব্যাকটেরিয়ার একটি নির্দিষ্ট জিন, ‘১৬এস আরআরএনএ’-এর উপর নজর দিয়েছেন, যা জন্মগত ভাবে মানুষের শরীরে থাকে না। বিভিন্ন ব্যক্তির শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে এই জিনের গঠন ভিন্ন হয়।
গবেষণায় ১২টি বিষমকামী যুগলের যৌনাঙ্গের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, মিলনের পর সঙ্গীর শরীরে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়ার ‘স্বাক্ষর’ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
আশ্চর্যজনকভাবে, কন্ডোম ব্যবহার করা হলেও এই ব্যাকটেরিয়ার স্থানান্তর ঘটছে, যদিও সেক্ষেত্রে মূলত নারী শরীর থেকে পুরুষ শরীরে সংক্রমণের হার বেশি ছিল। তবে ডঃ চ্যাপম্যান জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে মিলনের ঠিক কোন পর্যায়ে কন্ডোম ব্যবহার করা হয়েছে, সেই বিষয়টি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, পিউবিক হেয়ার, ওরাল সেক্স, লিঙ্গত্বক ছেদন বা লুব্রিক্যান্টের ব্যবহার, কোনও কিছুই ব্যাকটেরিয়ার স্থানান্তরে বিশেষ প্রভাব ফেলে না। তবে মিলনের পর পুরুষদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এই জীবাণু শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে একটি অন্তরায় হতে পারে।
আরও পড়ুন: ৭ কোটি শুক্রাণু চাই! চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ৫০ সঙ্গীর সঙ্গে একটানা সঙ্গম রানিমার! কোথায় থাকে এই রানি?
ডঃ চ্যাপম্যান আরও জানান, একটি যুগলের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে সঙ্গীর শরীর থেকে পাওয়া ব্যাকটেরিয়ার ছাপ পাঁচ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। গবেষকদের মতে, এই পদ্ধতি ফরেনসিক পরীক্ষার সময়সীমাও বাড়িয়ে দিতে পারে। সাধারণত, যৌন হেনস্থার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শুক্রাণু শনাক্ত করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু এই নতুন পদ্ধতিতে সেই সময়সীমা অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব।
তবে ডঃ চ্যাপম্যান স্বীকার করেছেন যে, এই প্রযুক্তিকে আদালতের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এখনও অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। ব্যাকটেরিয়ার ‘স্বাক্ষর’-এর স্বতন্ত্রতাকে আরও নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করার পদ্ধতি তৈরি করতে হবে। এছাড়া, যৌন মিলন ছাড়া অন্য কী কী কারণে ‘সেক্সোম’ পরিবর্তিত হতে পারে বা মহিলাদের ঋতুচক্রের সময় এতে কী ধরনের বদল আসে, তাও খতিয়ে দেখতে চান গবেষকরা।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও, সিডনির ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির ফরেনসিক জেনেটিক্সের অধ্যাপক ডেনিস ম্যাকনেভিন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যেখানে ডিএনএ প্রমাণ অপর্যাপ্ত বা অনুপস্থিত, সেখানে সাক্ষ্যকে সমর্থন বা খণ্ডন করতে ব্যাকটেরিয়ার জেনেটিক প্রোফাইলিং সহায়ক হতে পারে।” তবে তাঁর মতে, “ফরেনসিক পরীক্ষায় ডিএনএ বিশ্লেষণই সর্বদা প্রথম বিকল্প থাকবে।” তিনি এই পদ্ধতিকে ‘শেষ আশ্রয়’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এটি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল- এক কথায় এটি একটি ‘বিশেষ ধরনের বিশ্লেষণ’।”
