বেশিরভাগ মানুষ যখনই ফুসফুসের ক্যানসারের কথা ভাবেন, তখনই সিগারেটের প্যাকেটের ছবিটা মনে আসে। যদিও ধূমপান বিশ্বব্যাপী ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান কারণ, তবুও এই রোগটি কেবল ধূমপায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যাঁরা কখনও সিগারেট স্পর্শ করেননি, তাঁদেরও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে।
অনকোলজিস্ট ডাঃ চেতনা বকশি বলছেন " ফুসফুসের ক্যানসার একটি বহুমুখী রোগ যার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তামাক, ধোঁয়া একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ, তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। পরিবেশগত প্রভাব, জেনেটিক্স এবং এমনকি কিছু চিকিৎসাও ভূমিকা পালন করতে পারে"
বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে শুরু করে অদৃশ্য গ্যাস, আমাদের চারপাশের প্রায়ই এমন সব নীরব ঘাতক লুকিয়ে রাখে, যা আমরা দেখতে পাই না। সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় হল রেডন গ্যাস। এটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ যা মাটি থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে ঘরের ভিতরে জমা হতে পারে। গন্ধহীন এবং স্বাদহীন। এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমেই শনাক্ত করা যেতে পারে, তবে দীর্ঘক্ষণ ধরে সংস্পর্শে থাকা ফুসফুসের টিস্যুর মারাত্মকভাবে ক্ষতি করতে পারে।
বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলিতে বায়ু দূষণও এই ঝুঁকির কারণ। "যানবাহন এবং শিল্পকারকানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কণা প্রতিদিন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে এবং এর ক্রমাগত সংস্পর্শে আসার ফলে ক্ষতি হতে পারে," বলেন ডঃ বকশি।
আরও পড়ুন: পুজোয় পাবেন আলিয়ার মতো চকচকে ত্বক! বিটরুটকে কাজে লাগালেই বাজিমাত, রইল বিশেষ টিপস
নিজে ধূমপান না করলেও ধূমপায়ীদের আশেপাশে থাকা ক্ষতিকারক হতে পারে। বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে বা জনসমক্ষে - দীর্ঘক্ষণ সিগারেটের ধোয়ার মাঝে থাকলে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সব ঝুঁকি পরিবেশগত নয়। কিছু ব্যক্তি বংশগতভাবে এমন জিনগত পরিবর্তনের শিকার হন, যা তাদের ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় অন্যান্য অসুস্থতার জন্য রেডিয়েশন থেরাপির ফলে এই রোগ হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসায় অগ্রগতি হয়েছে। "টার্গেটেড থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি রোগীদের জন্য নতুন দরজা খুলে দিয়েছে, বিশেষ করে যাঁদের ক্যানসার ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। প্রাথমিক শনাক্তকরণ এখনও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি চিকিৎসাকে তরান্বিত করতে পারে," বলেছেন ডঃ বকশি।
হেলথলাইনের মতে , প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে এটি খুব সহজেই নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হল প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুসের ক্যানসারের কোনও নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। যার কারণে এটি শনাক্ত করতে দেরি হয় এবং ততক্ষণে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে। শ্বাসকষ্ট, পিঠে ব্যথা, কাশি, কফের সাথে রক্ত, গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস, দ্রুত ওজন হ্রাস, শ্বাস নালীর সংক্রমণের মতো উপসর্গ দেখা যায়।
বেশিরভাগ ফুসফুসের ক্যানসারের রোগীরা ঘাড়ে বা কলার বোনে পিণ্ডের অস্তিত্ব, হাড়ের ব্যথা, বিশেষ করে পিঠে, পাঁজরে বা নিতম্বে ব্যথা, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, হাত বা পায়ে অসাড়তা, ত্বক এবং চোখে হলুদ ভাব, চোখের পাতা ঝুলে পড়া, চোখের মণি সঙ্কুচিত হওয়া, মুখের একপাশে ঘাম, কাঁধে ব্যথা, মুখ এবং শরীরের উপরের অংশ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি অনুভব করেন।
