অনেকের জন্য দিনের শুরুতে এক কাপ গরম কফি বা চা-ই হলো সেরা সঙ্গী। এই পানীয়ের উষ্ণতা যেমন স্বস্তি দেয়, তেমনই গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত গরম পানীয় গ্রহণ করলে খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
এখানে চিন্তার বিষয় পানীয় নয়, বরং তার তাপমাত্রা। ৬৫° সেলসিয়াসের বেশি গরম পানীয় খাদ্যনালীর আস্তরণকে বারবার পোড়াতে বা উত্তেজিত করতে পারে। সময়ের সঙ্গে এই ক্রমাগত তাপজনিত ক্ষতি কোষে আঘাত হানতে পারে এবং খাদ্যনালীর স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন—মাত্র কয়েক মিনিট গরম পানীয় ঠান্ডা হতে দিলে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য বড় উপকার পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন অনকো-সার্জন ডা. এস. কে. বালা।
এই পরামর্শ আসলে ক্যানসার প্রতিরোধের সাধারণ নিয়মগুলির সঙ্গেই মেলে। যেমন ধূমপান না করা, মদ কম খাওয়া বা প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো আমাদের সুরক্ষা দেয়, তেমনি পানীয় একটু ঠান্ডা করে খাওয়াও একটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা।
এর মানে এই নয় যে, একেবারেই চা বা কফি এড়িয়ে চলতে হবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় খাওয়া হলে দু’টিই নিরাপদ এবং উপভোগ্য। প্রতিরোধ মানেই সব সময় জীবনযাপনে বড় পরিবর্তন আনা নয়, অনেক সময় এটি নির্ভর করে ছোট ছোট দৈনন্দিন অভ্যাসের উপর। গরম পানীয় কয়েক মিনিট ঠান্ডা হতে দিলে খাদ্যনালীকে বারবার আঘাত থেকে রক্ষা করা যায়। এই ছোট অথচ কার্যকর অভ্যাস প্রমাণ করে যে সচেতন সিদ্ধান্তই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ক্যানসার প্রতিরোধের কয়েকটি টিপস
১. ধূমপান ও তামাক থেকে দূরে থাকুন
ধূমপান, পান বা গুটখার মতো তামাকজাত দ্রব্য ক্যানসারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। এগুলো সম্পূর্ণভাবে এড়ানোই সেরা প্রতিরোধ।
২. অ্যালকোহল কমান
অতিরিক্ত মদ্যপান মুখ, খাদ্যনালী, লিভারসহ বিভিন্ন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। সম্ভব হলে এড়িয়ে চলুন, নাহলে সীমিত করুন।
৩. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
শাকসবজি, ফল, ডাল, আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান। অতিরিক্ত তেল-মশলা, ভাজাভুজি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে দিন।
৪. সুস্থ ওজন বজায় রাখুন
স্থূলতা বিভিন্ন ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত। নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৫. শরীরচর্চা করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
৬. সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা নিন
সরাসরি রোদে কম সময় থাকুন, সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং সুরক্ষামূলক পোশাক পরুন।
৭. টিকা নিন
কিছু ভাইরাস ক্যানসার তৈরি করতে পারে, যেমন হেপাটাইটিস-বি (লিভার ক্যান্সার) ও এইচপিভি (সার্ভিক্যাল ক্যান্সার)। এই টিকা নেওয়া অত্যন্ত কার্যকর প্রতিরোধ।
৮. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
বুকের এক্স-রে, প্যাপ স্মিয়ার, ম্যামোগ্রাফি বা কোলোনোস্কোপির মতো পরীক্ষায় ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে। সময়মতো চিকিৎসা নিলে আরোগ্যের সম্ভাবনা অনেক বাড়ে।
৯. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
দূষিত জল বা খাবার এড়িয়ে চলুন, যা দীর্ঘমেয়াদে সংক্রমণ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
১০. মানসিক চাপ কমান
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে। ধ্যান, যোগব্যায়াম বা নিজের পছন্দের কাজে সময় দিন
