সামনেই লক্ষ্মীপুজো। কমবেশি সব বাঙালি বাড়িতেই ঘটা করে তৈরি হবে নানা রকমের নারকেল নাড়ু। বেশ কিছুটা সময় যত্ন করে রেখে তা খাওয়াও হবে। কিন্তু যাঁরা উচ্চ রক্তশর্করা সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা কি নিরাপদে নারকেল খেতে পারেন?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় নারকেল রাখা সম্ভব, তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়। বাদামি খোসার মধ্যে থাকা সাদা অংশে তুলনামূলকভাবে কম কার্বোহাইড্রেট থাকে, কারণ এর বেশিরভাগ কার্বোহাইড্রেট ফাইবার থেকে আসে। এই ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং রক্তে শর্করার হঠাৎ ওঠানামা রোধ করতে সাহায্য করে, ফলে নারকেল অনেক প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে নিরাপদ।

ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, কোরানো নারকেল এবং অন্যান্য ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কম গ্লাইসেমিক সূচকের সঙ্গে সম্পর্কিত।

তবুও নারকেল খাওয়া নিয়ে এক প্রকার দ্বিধা থেকেই যায়। ফাইবারের সুবিধা থাকলেও নারকেল ক্যালোরি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ, যা অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যাঁরা ইতিমধ্যেই হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।

পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, সঠিকভাবে খেলে নারকেল উপকারী হতে পারে। ফাইবার ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং হজম ভাল রাখে। ফলে খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। নারকেলে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খিদে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রয়োজন কমায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

নারকেলের মধ্যম চেইন ফ্যাট দ্রুত শক্তিতে পরিণত হয় এবং শরীরে চর্বি হিসাবে জমে না, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও নারকেলের সাদা অংশে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং আয়রন থাকে, যা শক্তি উৎপাদন ও বিপাকের জন্য উপকারী। ফলে এটি প্রক্রিয়াজাত খাবারের চেয়ে পুষ্টিকর।

তবে পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। ডায়েটিশিয়ানরা পরামর্শ দেন, ডায়াবেটিস রোগীরা দিনে প্রায় ৩০–৪০ গ্রাম, অর্থাৎ দু’থেকে তিন চামচ কোরানো নারকেল খেতে পারেন। তাজা এবং মিষ্টিহীন নারকেলই সবচেয়ে ভাল, আর বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হওয়া মিষ্টি নারকেল বা নারকেল দিয়ে মিষ্টি এড়ানো উচিত।

বিশেষজ্ঞরা আরও পরামর্শ দেন, নারকেল কম গ্লাইসেমিক খাবারের সঙ্গে খাওয়া উচিত, যেমন সবজি, ডাল বা স্যালাড, যা স্বাদ এবং পুষ্টি বৃদ্ধি করে। নারকেলকে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সঙ্গে যেমন অলিভ অয়েল বা বাদামের সঙ্গে খেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের প্রভাব কমানো যায়।

চিকিৎসকরা রোগীদের পরামর্শ দেন, নারকেল খাওয়ার পর রক্তের শর্করা পর্যবেক্ষণ করতে। কারণ সহনশীলতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। নিজেই পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, নারকেল দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় নিরাপদে রাখা যায় কি না।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাধারণ মত হল, বাদামী খোসাসহ নারকেলের সাদা অংশ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে যদি তা নিয়ন্ত্রণে খাওয়া হয়। এর কম গ্লাইসেমিক সূচক এবং উচ্চ ফাইবার উপাদান অনেক প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে নিরাপদ, তবে ক্যালোরি ও ফ্যাটের কারণে এটি অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।