আজকাল ওয়েবডেস্ক: সমাজ এক বহমান ব্যবস্থা। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায় রূপ। তেমনই এক পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা। সম্প্রতি মর্গান স্ট্যানলির প্রকাশিত এক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০৩০-এর মধ্যেই বদলে যেতে পারে সমাজচিত্র। বদলে যেতে পারে নারী পুরুষের সামাজিক অভিব্যক্তি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমেরিকার ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সি নারীদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশই হবেন সিঙ্গল ও নিঃসন্তান। গবেষণায় আরও জানানো হয়েছে, এটি কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং গত এক দশকের নানা পরিবর্তনের যৌক্তিক পরিণতি।
 
 এই প্রবণতা যে কেবল আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। গোটা পৃথিবীজুড়েই নারীদের মধ্যে ব্যক্তিস্বাধীনতা, পেশাগত জীবনকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং আত্মপরিচয়ের খোঁজে এগিয়ে চলার স্পষ্ট ছাপ মিলছে। আর সেকারণেই নতুন করে তৈরি হচ্ছে নারীত্বের সংজ্ঞা।
 
 আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
 
 অনেকেই বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ‘পরিবারবিরোধী’ মানসিকতা নয়, বরং সামাজিক চাপে গঠিত পুরুষতান্ত্রিক জীবন কাঠামোর থেকে নিজেকে মুক্ত করার এক সচেতন সিদ্ধান্ত। নিউ ইয়র্কের সমাজতাত্ত্বিক ক্যারোলিন মিসেল বলছেন, “আজকের নারীরা জানেন, তাঁদের জীবনের উদ্দেশ্য শুধুই স্ত্রী বা মা হওয়া নয়। তাঁরা চাইছেন, নিজের স্বপ্নের পথে হেঁটে সফল হতে।”
 
 অনেকেই এখন বিয়েকে দেখছেন একটি ‘চয়েস’ হিসেবে, কোনও বাধ্যতামূলক ‘স্টেপ’ হিসেবে নয়। একইভাবে বদলে যাচ্ছে সন্তান ধারণের বিষয়টিও। অনেকেই মনে করছেন সন্তান কেবল পরিবার বা উত্তরাধিকার রক্ষার সাধন নয়, বরং সন্তান পালন এক বিরাট দায়িত্ব এবং মানসিক প্রস্তুতির বিষয়।
 
 আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
 
 অন্যদিকে বিয়ে না করে একা জীবন কাটানো নিয়ে সামাজিক ধারণা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। বিষয়টি এখন আর সামাজের চোখে ‘অপূর্ণতার’ ইঙ্গিত নয়। একা নারী মানেই নিঃসঙ্গ, নিরুপায়, এই ধারণাও ভেঙে পড়ছে দ্রুত। সমীক্ষা বলছে, আজকের সিঙ্গল নারীরা তাঁদের সামাজিক বন্ধন, অর্থনৈতিক সুরক্ষা এবং মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য নিজেরাই গড়ে তুলছেন। তাঁরা বাড়ি কিনছেন, বিনিয়োগ করছেন, ভ্রমণে যাচ্ছেন, এমনকী অনেকেই স্থায়ী ভাবে ‘লিভ-ইন’কে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের নতুন রূপ হিসাবে দেখছেন। অনেকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, বৃদ্ধ বয়সের সাহচর্য ও যত্নের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং প্রস্তুত।
 
 
এই পরিবর্তনের নেপথ্যে আরও একটি বড় চালিকাশক্তি টেকনোলজি ও ডিজিটাল সংস্কৃতি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আজকের নারীরা অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। স্বনির্ভর জীবনের নানা উদাহরণ উঠে আসছে প্রতিনিয়ত। নেটপ্রভাবী বা কর্মক্ষেত্রে সফল নারীরা প্রমাণ করছেন, বিয়ে বা সন্তান ছাড়াও জীবনের পরিপূর্ণতা সম্ভব।
 
 সব মিলিয়েই, সামাজিক মানচিত্রে এই পরিবর্তন এক বৈপ্লবিক মোড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে নারীর ভূমিকা নিয়ে প্রচলিত সংজ্ঞাগুলির পুনর্মূল্যায়ন হচ্ছে দ্রুত। এক গবেষক বলছেন, “পার্সোনাল ফুলফিলমেন্ট ইস বিকামিং দ্যা নিউ ট্র্যাডিশন।” অর্থাৎ পারিবারিক চিহ্ন নয়, বরং আত্মসন্তুষ্টিই এখন নারীর জীবনের মাপকাঠি। তাই গবেষকদের মতে, ২০৩০-এ এই সমীক্ষা আর কেবল একটি পরিসংখ্যান হয়ে থাকবে না। এ হবে এক নতুন জীবনের ধারার পরিচয়। কিন্তু এতো কিছুর পরেও উন্নয়নশীল দেশে এখনও নারীরা বহু পুরুষতান্ত্রিক জাঁতাকলে আবদ্ধ। মুক্তি চান তাঁরাও।
