আজকাল ওয়েব ডেস্ক: বাকি সময় বাড়ি মাথায় করে রাখত টমি। কালীপুজোর দিনটা এলেই ভয়ে এক্কেবারে কাঁটা! আর হবে না-ই বা কেন? বাইরে যে সমানে কানফাটানো বাজির আওয়াজ! ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে যাবে, তারও উপায় নেই। পাড়ার দুষ্টু ছেলেপিলে কখন পাকড়াও করে লেজে তারাবাতি বেঁধে দেবে! আতঙ্কে কুঁকড়ে, লেজ গুটিয়ে গৃহকর্তার খাটের তলায় সেঁধিয়ে যেত সোজা!
দীপাবলি মানে আলোর উৎসব। উঁহু, শব্দেরও। এবং কানফাটানো শব্দের। ঘড়ির কাঁটা যত এগোয়, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে শব্দবাজি। আর তার সবচেয়ে বেশি মাসুল গোনে বাড়ির পোষ্যরা।
কুকুর, বেড়াল, খরগোশ, পাখির দল। কারণ ওদের শব্দ সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের থেকে ঢের কম। হাতেগোনা কয়েকটা দিন পরেই কালীপুজো। তার আগে বেশ তাই চিন্তায় পড়েছেন বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি বেসরকারি রেডিওতে চ্যানেলের রিজিওনাল প্রোগামিং হেড বিশ্বজ্যোতির বাড়িতে সদ্য এসেছে পোষ্য। তিনি বলছেন, “আমার কুকুরটার বয়স এখন তিন মাসও হয়নি। আমারও এটাই প্রথম পোষ্য। ফলে বেশ চিন্তাতেই আছি। কুকুরের শোনার ক্ষমতা মানুষের থেকে অনেক গুণ বেশি। শব্দবাজির আওয়াজে ওরা খুব ভয় পায়, ওদের অ্যাংজাইটি হয়, এমনকী সাংঘাতিক আওয়াজে ওদের হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে!”
শব্দবাজির কারণে পোষ্যদের এই দুরবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ জনপ্রিয় আরজে অয়ন্তিকা চক্রবর্তী। তিনি এক জন মা। শুধু এক ছোট্ট মেয়ের নয়, চারপেয়ে সন্তানদেরও। নিজে ছোটবেলা থেকেই অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ার হিসেবে কাজ করেন। তাঁর বাড়িতে বরাবরই ঠাঁই পেয়ে এসেছে অসুস্থ, রুগ্ন বা আহত কুকুর-বেড়ালেরা। বাজির আওয়াজে কুকুর-বেড়ালদের কতটা অসুবিধে হয়, নিজের চোখেই দেখে এসেছেন বরাবর। নিজে তাই নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন। উৎসবের দিনে পাড়ায় বেরিয়ে সবাইকে সচেতন করার চেষ্টাও করে আসছেন প্রতি বছরই। অয়ন্তিকার কথায়, “শব্দবাজির ক্ষেত্রে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বেঁধে দেওয়া শব্দমাত্রা ১২৫ ডেসিবেল। আমরা মানুষেরা তার চেয়ে বেশি শব্দও সহ্য করে ফেলতে পারি। কিন্তু কুকুর বেড়ালের সহনীয় শব্দমাত্রা অনেকটাই কম। খুব বেশি হলে ৮০ ডেসিবেল পর্যন্ত ওরা সহ্য করতে পারে। পৃথিবীটা তো সবার। মানুষের যেমন বাঁচার অধিকার আছে, অন্য জীবজন্তুরও আছে কিন্তু।”
কালীপুজোর রাতে আপনার পোষ্যকে নিরাপদে রাখতে তাই বাড়তি সতর্ক হতে হবে আপনাকেই। কী করবেন ওদের জন্য?
পশু বিশেষজ্ঞ স্বপন নন্দনের কথায়, “দরজা-জানলা বন্ধ করে পোষ্যকে বাড়িতেই রাখুন। বাইরে বার করবেন না। চেষ্টা করুন বাড়িতে যেখানে সবচেয়ে কম শব্দ আসে, সেখানেই ওকে রাখতে। যতটা সম্ভব স্বস্তি দিন ওকে, আগলে রাখুন। আশপাশে বাজি ফাটলে ও যদি খুব ভয় পেয়ে যায়, ওকে আদর করুন, নিজের কোলের মধ্যে বা বাড়িতে ওর কোনও সেফ প্লেস থাকলে সেখানেই রাখুন। মালিকের সান্নিধ্যে থাকলে, তাঁর ছোঁয়া পেলে ওরা আশ্বস্ত হয়, বুকে বল আসে। সঙ্গে একেবারে হাল্কা কোনও মিউজিক চালিয়ে দিতে পারেন শান্ত করার জন্য। আর ওর কোনও রকম অসুস্থতা বা অসুবিধা খেয়াল করলে তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।”
