আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজয়ার বিষণ্ণ সুর বাতাসে মিলিয়ে যেতেই যেন এক সাজোসাজো রব। পাড়ার প্যান্ডেলের বাঁশ খুলতে খুলতেই দোকানপাটে জ্বলে উঠছে টুনি লাইটের সারি। দুর্গাপুজোর আমেজ কাটতে না কাটতেই দরজায় কড়া নাড়ছে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো আর দীপাবলি। উৎসবের এই এক স্রোত থেকে আর এক স্রোতে গা ভাসানোর ঠিক মাঝের এই সময়টা কিন্তু বড় গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নতুন করে উৎসবের জন্য তৈরি হওয়া নয়, এই সময়টা ঘর এবং মনকে ভারমুক্ত করার এক আদর্শ সুযোগ। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনের আবাহনই তো দীপাবলির আসল বার্তা।
পুজোর ক’দিন কেনাকাটা, ঘোরাঘুরি আর অতিথি আপ্যায়নের পর প্রায় প্রত্যেক বাড়ির চেহারাই কিছুটা অগোছালো হয়ে পড়ে। আলমারিতে নতুন জামাকাপড়ের ভিড়ে পুরনোরা ব্রাত্য, রান্নাঘরে জমেছে বাড়তি তেলের কৌটো, আর ড্রয়িংরুমের কোণে রাখা পুজোর গিফ্ট বক্স বা পুরনো পত্রিকা। দীপাবলির আগে এই জঞ্জাল সাফাই বা ‘ডিক্লাটারিং’ শুধু ঘর পরিষ্কার রাখা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক মানসিক এবং আধ্যাত্মিক শুদ্ধিকরণও। বিশ্বাস, পরিচ্ছন্ন এবং আলোকোজ্জ্বল গৃহেই মা লক্ষ্মীর আগমন ঘটে।
কাজটি কঠিন মনে হলেও কয়েকটি ধাপে এগোলে তা সহজ হয়ে উঠবে।
প্রথম ধাপ: আলমারির আনাচকানাচ
পুজোয় কেনা নতুন পোশাকের জন্য জায়গা করতে পুরনো পোশাকগুলি গোছানো জরুরি। যে পোশাকগুলি গত এক বছরে একবারও পরা হয়নি, সেগুলি আলাদা করুন। অকারণ মায়া না করে সেগুলি এমন কাউকে দিন, যাঁর প্রয়োজন আছে। উৎসবের মরসুমে এই ছোট ছোট দান আপনার মনেও এক অনাবিল শান্তি এনে দেবে। ছেঁড়া বা বাতিল পোশাকগুলিও ফেলে না দিয়ে পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

দ্বিতীয় ধাপ: বই ও কাগজের স্তূপ
পুজো সংখ্যা, পুরনো খবরের কাগজ, অপ্রয়োজনীয় বিল-এসব জমতে জমতে ঘরের অনেকটা জায়গা দখল করে নেয়। প্রয়োজনীয় নথি গুছিয়ে ফাইলবন্দি করুন। বাকি কাগজ, পত্রিকা বিক্রি করে দিন। বুকশেলফে জমে থাকা ধুলো ঝেড়ে বইগুলিকে নতুন করে সাজান। দেখবেন, ঘরের বাতাসটাই কেমন হালকা লাগছে।
তৃতীয় ধাপ: রান্নাঘরের অভিযান
উৎসব মানেই ভূরিভোজ। পুজোর পরে রান্নাঘরের তাক বা ফ্রিজে অনেক বাড়তি বা মেয়াদ উত্তীর্ণ মশলা, সস অথবা বেঁচে যাওয়া খাবার জমে থাকে। দীপাবলির মিষ্টি, ভাজাভুজি ইত্যাদি বানানোর আগে রান্নাঘরকে ভারমুক্ত করা প্রয়োজন। কৌটোগুলি পরিষ্কার করে, প্রয়োজনীয় জিনিস সামনে রেখে বাকিটা সরিয়ে ফেলুন।
চতুর্থ ধাপ: ছোটখাটো জিনিস
পুরনো কসমেটিক্স, খারাপ হয়ে যাওয়া ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ভেঙে যাওয়া শোপিস বা অব্যবহৃত উপহার- এই ছোট ছোট জিনিসগুলিই সবচেয়ে বেশি জঞ্জাল তৈরি করে। একটি বড় বাক্স নিয়ে এই সব অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তাতে ভরে ফেলুন। ঘর গোছানোর এই প্রক্রিয়ায় আপনার সঙ্গী বা বাড়ির ছোটদেরও যুক্ত করুন। এতে কাজও দ্রুত হবে, আবার একসঙ্গে কাজ করার আনন্দও পাওয়া যাবে।
আসলে, ঘর সাফাই মানে শুধু আবর্জনা দূর করা নয়। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের মনে জমে থাকা পুরনো চিন্তা, ক্লান্তি এবং নেতিবাচকতাকেও দূরে সরিয়ে দিই। একটি পরিচ্ছন্ন, গোছানো ঘর যেমন মনকে শান্ত করে, তেমনই নতুন করে ভাবার অবকাশ দেয়। তাই দীপাবলিতে শুধু প্রদীপ বা টুনি লাইটের আলোয় নয়, আপনার ঘরকে সাজিয়ে তুলুন পরিচ্ছন্নতার স্নিগ্ধ আলোয়। দেখবেন, আলোর উৎসব আপনার জীবনেও এক নতুন ঝরঝরে অনুভূতি নিয়ে আসবে।
