আজকাল ওয়েবডেস্ক: কষা মাংস হোক বা মাছের কালিয়া, পেঁয়াজ ছাড়া বাঙালির রান্না যেন অসম্পূর্ণ। কিন্তু এই অপরিহার্য আনাজটি কাটতে গেলেই শুরু হয় বিপত্তি। ছুরি-বঁটি চলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই চোখ জ্বালা করে জলে ভরে ওঠে। রান্নাঘরের এই দৃশ্যটি এতটাই পরিচিত যে একে রোজনামচার অঙ্গ বললেও ভুল হবে না। কিন্তু এই অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা এড়ানোর কি সত্যিই কোনও উপায় নেই? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ঘটনার কারণটা জানলে এবং কিছু সহজ ঘরোয়া কৌশল মানলে চোখের জল ছাড়াই পেঁয়াজ কাটা সম্ভব।

 

কান্না আটকানোর উপায় জানার আগে, পেঁয়াজ কেন কাঁদায় তা বোঝা জরুরি। পেঁয়াজের কোষে সালফারের কিছু যৌগ থাকে। যখন আমরা পেঁয়াজ কাটি, তখন পেঁয়াজের কিছু কোষ ভেঙে যায় এবং এই যৌগগুলি বাতাসের সংস্পর্শে আসে। পেঁয়াজের মধ্যে থাকা কিছু এনজাইম বা উৎসেচক তখন এই যৌগগুলির সঙ্গে মিশে গিয়ে ‘সিন-প্রোপ্যানেথিয়াল-এস-অক্সাইড’ নামক এক ধরনের উবে যাওয়া গ্যাস তৈরি করে। এই গ্যাসটি বাতাসে ভেসে আমাদের চোখে পৌঁছায় এবং চোখের জলীয় অংশের (ল্যাক্রিমাল ফ্লুইড) সঙ্গে মিশে মৃদু সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিডই চোখে জ্বালা ও অস্বস্তির সৃষ্টি করে। মস্তিষ্ক তখন চোখকে সুরক্ষিত রাখতে ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিকে নির্দেশ পাঠায় এবং অতিরিক্ত জল নিঃসৃত হয়ে অ্যাসিডটিকে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করে। এর ফলেই আমাদের চোখ থেকে জল পড়তে থাকে।

 

কান্না এড়ানোর সহজ উপায়-

বিজ্ঞানের কারণটা যখন জানা গেল, তখন সমাধানটাও খুঁজে নেওয়া সহজ। কিছু ঘরোয়া টোটকা মানলেই এই রাসায়নিক বিক্রিয়াকে অনেকাংশে প্রতিহত করা যায়।

১। ঠান্ডা করার কৌশল: পেঁয়াজ কাটার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে সেটিকে ফ্রিজে বা কিছুক্ষণের জন্য ডিপ-ফ্রিজারে রেখে দিন। ঠান্ডা তাপমাত্রা পেঁয়াজের মধ্যে থাকা এনজাইমকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, ফলে গ্যাস তৈরির প্রক্রিয়াটি অনেক ধীর হয়ে যায়। এর ফলে চোখে জ্বালা করার অনুভূতিও কমে আসে।

২। ধারালো ছুরির ব্যবহার: ভোঁতা ছুরির বদলে সবসময় একটি ধারালো ছুরি বা বঁটি ব্যবহার করুন। ধারালো অস্ত্র পেঁয়াজের কোষগুলিকে থেঁতলে দেওয়ার বদলে নিখুঁতভাবে কেটে দেয়। ফলে কোষ কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জ্বালা ধরানো গ্যাসের নিঃসরণও কম হয়।

৩। জলের সাহায্য: জলের তলায় একটি পাত্রে পেঁয়াজ রেখে কাটতে পারেন। জল ওই উবে যাওয়া গ্যাসটিকে দ্রবীভূত করে নেয় এবং বাতাসে মিশে চোখে পৌঁছাতে দেয় না। এছাড়া, পেঁয়াজ কাটার আগে ছুরি বা বঁটিটি জলে ভিজিয়ে নিলেও উপকার পাওয়া যায়।

৪। গোড়ার অংশ শেষে কাটুন: পেঁয়াজের গোড়া বা মূলের অংশটিতেই সালফারের যৌগ সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে। তাই পেঁয়াজের বাকি অংশ কেটে নেওয়ার পর একেবারে শেষে গোড়ার অংশটি কাটুন ও ফেলে দিন।

৫। বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা: যেখানে হাওয়া চলাচল করে, যেমন জানলার ধারে বা চিমনি কিংবা পাখা চালিয়ে পেঁয়াজ কাটুন। এতে বাতাসে ভাসমান গ্যাস আপনার চোখ পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই উড়ে যাবে।

৬। কিছু মজাদার টোটকা: অনেকে পেঁয়াজ কাটার সময় মুখে পাউরুটির টুকরো বা চুইংগাম চিবোনোর পরামর্শ দেন। এর কারণ হল, চিবোনোর সময় আমাদের মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে, ফলে নাক দিয়ে গ্যাস মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে না। সুতরাং, পরের বার রান্নাঘরে পেঁয়াজ কাটার আগে আর ভয় পাবেন না। এই সহজ উপায়গুলি মাথায় রাখলে পেঁয়াজ কাটা আর মোটেই ভয়ের

কারণ হবে না।