আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাপ, আরশোলা, উচ্চতা বা অন্ধকার- এমন জিনিসে ভয় কমবেশি অনেকেই পান। কিন্তু ভয় যখন যুক্তির সীমানা পেরিয়ে এক তীব্র ও অমূলক আতঙ্কে পরিণত হয়, তখন মনোবিজ্ঞানের ভাষায় তাকে ‘ফোবিয়া’ বলা হয়। এমন অনেক ফোবিয়া রয়েছে যা আমাদের কাছে পরিচিত, যেমন উচ্চতার ভয় (অ্যাক্রোফোবিয়া) বা বদ্ধ স্থানের আতঙ্ক (ক্লস্ট্রোফোবিয়া)। কিন্তু মানুষের মন এতটাই জটিল যে এমন কিছু বিচিত্র ফোবিয়াও রয়েছে, যা শুনলে অবাক হতে হয়। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ জিনিসও কারও কারও কাছে হয়ে উঠতে পারে চরম আতঙ্কের কারণ। এমনই পাঁচটি অদ্ভুত ফোবিয়ার কথা জেনে নেওয়া যাক।

১। কৌম্পোনোফোবিয়া: বোতামের ভয়

শুনতে যতই অদ্ভুত লাগুক, বহু মানুষ পোশাকের বোতাম দেখলে বা স্পর্শ করলে তীব্র অস্বস্তিতে ভোগেন। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা বোতামযুক্ত পোশাক পরা এড়িয়ে চলেন। শুধু তাই নয়, অন্যের পোশাকেও বোতাম দেখলে তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক কাজ করে। মনোবিদদের মতে, শৈশবের কোনও বেদনাদায়ক স্মৃতি, যেমন- বোতাম গিলে ফেলা বা বোতামের সঙ্গে জড়িত কোনও দুর্ঘটনার কারণে এই ফোবিয়ার জন্ম হতে পারে। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবসও নাকি এই ফোবিয়ায় ভুগতেন, যে কারণে তাঁকে প্রায়শই বোতামবিহীন পোশাকে দেখা যেত।

২। ওমফালোফোবিয়া: নাভির ভয়

শরীরেরই একটি অংশ, নাভি, অনেকের কাছে আতঙ্কের কারণ। এই ফোবিয়ায় আক্রান্তরা নিজের বা অন্যের নাভি স্পর্শ করতে ভয় পান। এমনকি নাভির দিকে তাকাতেও অস্বস্তি বোধ করেন। তাঁদের অবচেতন মনে নাভিকে শরীর থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বা ‘অন্যরকম’ কিছু বলে মনে হতে থাকে। নাভি পরিষ্কার করার কথা ভাবলেও অনেকের মধ্যে আতঙ্ক জন্মায়।

৩। অ্যারাচিবিউটিরোফোবিয়া: পিনাট বাটার সংক্রান্ত ভয়

এটি বিশ্বের অন্যতম বিচিত্র একটি ফোবিয়া। এর সঙ্গে চিনাবাদাম বা মাখনের ভয় জড়িত নয়, বরং আতঙ্কটি সম্পূর্ণ অন্য। পিনাট বাটার খাওয়ার সময় সেটি মুখের তালুতে আটকে যাওয়ার যে অনুভূতি, তাতেই তীব্র ভয় পান এই ফোবিয়ায় আক্রান্তরা। তাঁদের মনে হতে থাকে, এর ফলে তাঁদের দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা তাঁরা এটি মুখ থেকে বের করতে পারবেন না। এই আতঙ্কের জেরে তাঁরা পিনাট বাটার বা সেই জাতীয় আঠালো খাবার এড়িয়ে চলেন।

৪। আলেকটোরোফোবিয়া: মুরগির ভয়

গ্রামবাংলায় বা শহরের বাজারে মুরগি একটি অতি পরিচিত প্রাণী। কিন্তু নিরীহ এই প্রাণীটিও কারও কারও কাছে চরম আতঙ্কের কারণ হতে পারে। আলেকটোরোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা জ্যান্ত মুরগি তো বটেই, এমনকি মুরগির ছবি, পালক বা ডিম দেখলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শৈশবে মুরগির ঠোকর বা তাড়া খাওয়ার মতো কোনও ঘটনা থেকে এই ভয়ের জন্ম হতে পারে।

৫। হিপোপোটোমোনস্ট্রোসেসকুইপেডালিওফোবিয়া: বড় শব্দের ভয়

এই ফোবিয়াটি সম্ভবত সবথেকে বিদ্রূপাত্মক। কারণ, এই ফোবিয়ার নামটি নিজেই একটি বিরাট বড় শব্দ। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা লম্বা বা জটিল শব্দ উচ্চারণ করতে বা শুনতে ভয় পান। তাঁদের মনে হতে থাকে, এই ধরনের শব্দ ভুল উচ্চারণ করলে তাঁরা বিদ্রূপের শিকার হবেন বা নিজেদের বোকা প্রমাণ করবেন। জনসমক্ষে কথা বলার সময় বা পড়ার সময় এই আতঙ্ক তীব্র আকার ধারণ করে।

মনোবিদদের মতে, এই সমস্ত ফোবিয়াই কোনও না কোনও মানসিক আঘাত বা অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িত। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এগুলি আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপির মাধ্যমে এই ধরনের অমূলক আতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।