আজকাল ওয়েবডেস্ক: চিনি নয়, এ বার এক চিমটে নুন! বিশ্বজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে কফি খাওয়ার এক বিচিত্র ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। তেতো ভাব কাটাতে এবং কফির আসল স্বাদ (ফ্লেভার) আরও খোলতাই করতে নাকি এক চিমটে নুনই যথেষ্ট। টিকটক থেকে ইনস্টাগ্রাম, সর্বত্রই এই নতুন ‘ফুড হ্যাক’ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। কিন্তু পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকেরা এই নতুন ট্রেন্ডে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। তাঁদের মতে, স্বাদ সামান্য বাড়াতে গিয়ে অজান্তেই ডেকে আনা হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপদ। এই অভ্যাস নিয়মিত চলতে থাকলে রক্তচাপ থেকে শুরু করে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: গাড়ির মধ্যেই ‘অপারেশন থিয়েটার’! লিঙ্গবৃদ্ধির নামে ইন্টারনেট দেখে এ কী করতেন হাতুড়ে ডাক্তার? চোখ কপালে পুলিশের

কফিতে নুন দেওয়ার প্রথা অবশ্য নতুন নয়। কিছু দেশে, বিশেষত ভিয়েতনাম এবং তাইওয়ানে ‘সল্টেড কফি’ বেশ জনপ্রিয়। নুন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড কফির তিক্ত ভাব কমাতে সাহায্য করে এবং মিষ্টি স্বাদকে বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত, যদি কফি বড্ড বেশি ভাজা, ডার্ক রোস্ট বা নিম্নমানের হয়, তবে তার কড়া ভাব কাটাতে নুন কার্যকর। এই তত্ত্বকেই হাতিয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইনফ্লুয়েন্সাররা একে নতুন ‘ট্রেন্ড’ হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।
আরও পড়ুন: নারী-পুরুষ সকলেই নগ্ন হয়ে ঘোরেন! একটি সুতোও থাকে না গায়ে! দেখুন বিখ্যাত সব ‘নগ্ন সৈকত’-এর ছবি

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সমস্যাটা এক চিমটে নুনে নয়, সমস্যাটা অভ্যাসে। চিকিৎসকদের মতে, আধুনিক খাদ্যাভ্যাসে এমনিতেই আমাদের শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সোডিয়াম প্রবেশ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সুপারিশ অনুযায়ী, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ বা প্রায় ২০০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন। চিপস, সস, আচার, পিৎজা, বার্গার, চিজ, প্রক্রিয়াজাত মাংস, সসেজ, সালামি থেকে শুরু করে সাধারণ পাউরুটি বা বিস্কুট- সব কিছুতেই লুকিয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে নুন। অধিকাংশ মানুষই লবণের নির্ধারিত সীমা পার করে ফেলেন অজান্তেই। এর উপর যদি নতুন করে কফিতে নুন খাওয়ার অভ্যাস যুক্ত হয়, তাহলে বিপদ আরও বেড়ে যেতে পারে। অনেকেই দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ কফি খান। প্রতি কাপে এক চিমটে নুন মানে দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা আরও অনেকটাই বেড়ে যাওয়া।

নুন-কফিতে কী কী বিপদ?
বিশেষজ্ঞরা একাধিক গুরুতর সমস্যার কথা উল্লেখ করছেন।
১। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ
শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়লে তা কোষ থেকে জল টেনে নেয় এবং রক্তে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। একে ‘ওয়াটার রিটেনশন’ বা শরীরে জল জমা বলে। এর ফলে ব্লাড ভলিউম বাড়ে। এই অতিরিক্ত রক্ত পাম্প করতে হৃদযন্ত্রকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, তাতে ধমনীর গায়ে তীব্র চাপ পড়ে। ফলস্বরূপ, উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। উচ্চ রক্তচাপই হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

২। কিডনির উপর মারাত্মক চাপ
শরীরের ‘ছাঁকনি’ হল কিডনি বা বৃক্ক। রক্ত থেকে এই অতিরিক্ত সোডিয়াম ছেঁকে বার করার কঠিন কাজটি কিডনিকেই করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির উপর এই অতিরিক্ত চাপ পড়লে তার কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। বিশেষত, যাঁদের আগে থেকেই কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য এই অভ্যাস বিষ পানের সমান।
৩। জলশূন্যতা
কফি নিজে একটি ‘ডাইইউরেটিক’ পানীয়, অর্থাৎ এটি খেলে শরীর থেকে জল ও খনিজ লবণ বেরিয়ে যায়, ঘনঘন প্রস্রাব পায়। এর সঙ্গে নুন যুক্ত হলে তা শরীর থেকে আরও জল টেনে নেয়। ফলে কফি খেয়ে তেষ্টা মেটার বদলে উল্টে জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪। ফোলা ভাব ও ইডিমা
শরীরে অতিরিক্ত জল জমার (ওয়াটার রিটেনশন) ফলে মুখ, হাত, পা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, যাকে ‘ইডিমা’ বলা হয়।

চিকিৎসকদের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হওয়া সব ট্রেন্ডই স্বাস্থ্যকর নয়। স্বাদ সামান্য ভাল করার জন্য হার্ট বা কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে বাজি রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বিশেষত, যাঁরা ইতিমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের এই ট্রেন্ড থেকে শত হস্ত দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়।