আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বই। যে কোনও বড় শহরের মতো মুম্বইতেও রয়েছে শহুরে কোলাহল, দৌড়ঝাঁপ আর অনন্ত প্রতিযোগিতা। এহেন ইঁদুর দৌড়ের মাঝে মানুষকে একটু শান্তি দিতে মুম্বইতে জন্ম নিল এক অদ্ভুত জায়গা- ‘ক্রায়িং ক্লাব’। খার রোডে অবস্থিত এই জায়গাটি আসলে এমন একটি নির্জন পরিসর, যেখানে মানুষ এসে অবলীলায় কাঁদতে পারেন। কাউকে কিছু বোঝানোর দায় নেই, কারও দৃষ্টির সামনে অপ্রস্তুত হওয়ারও ভয় নেই। এখানে অশ্রুই হয়ে উঠছে এক প্রকার থেরাপি।

জাপানের জনপ্রিয় ‘রুইকাতসু’ বা ‘টিয়ার-সিকিং থেরাপি’ থেকেই এই ক্লাবের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রতিষ্ঠাতারা। জাপানে বহু দিন ধরেই বিশ্বাস করা হয়, ক্রন্দন মানসিক চাপ কমাতে, শরীরের টেনশন হালকা করতে এবং আবেগের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সেই ধারণাকেই এবার নতুন রূপে মুম্বইয়ে নিয়ে এলেন কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তা।
আরও পড়ুন: নিজেই জানতেন না তিনি অন্তঃসত্ত্বা! মলত্যাগ করতে গিয়ে সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

ক্লাবের নিয়ম সহজ। নির্দিষ্ট সময়ে একটি নিরিবিলি ঘরে অংশগ্রহণকারীরা একত্রিত হবেন। ঘরে থাকবে নরম আলো, ধীর সুরের সঙ্গীত, সুগন্ধি মোমবাতি, এবং গরম চা-কফির কাপ। আর প্রচুর টিস্যু পেপার। এই ঘরে বসে কেউ চুপচাপ বসে নিজের মনে কাঁদতে পারেন, কেউ আবার অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন তাঁর অভিজ্ঞতা। আশ্চর্যের বিষয়, ক্লাবে প্রবেশ করার পর মিনিট দশেক কেটে গেলেই, শুরু হয় কান্নার আওয়াজ। কেউ হাউমাউ করে কাঁদেন, কেউ নিঃশব্দে ভিজিয়ে নেন চোখের পাতা। আয়োজকদের দাবি, এখানে কান্না আসলে এক ধরনের সামাজিক অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। অনেকে বলেন, একা ঘরে বসে কাঁদলে সেই দুঃখ দ্বিগুণ মনে হয়। কিন্তু অন্য কেউ যখন একইভাবে চোখের জল ফেলছে, তখন এক ধরনের সহমর্মিতা তৈরি হয়। যেন অচেনা মানুষদের মাঝেই তৈরি হয় এক অদৃশ্য বন্ধন। একজন অংশগ্রহণকারী জানান, ‘‘অফিসের চাপ, সম্পর্কের টানাপড়েন, অনিশ্চয়তায় ভরপুর দিনযাপন আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। এখানে এসে কান্নার মধ্যে দিয়ে আমি একেবারে হালকা হয়ে গিয়েছি। কেউ সেই কান্নাকে খারাপ ভাবছে না, কেউ প্রশ্ন করছে না, এই স্বাধীনতাই সবচেয়ে বড় পাওনা।’’
মনোবিজ্ঞানীরাও জানাচ্ছেন ক্ষেত্রবিশেষে কান্না মানুষের শরীরের পক্ষে উপকারী। এটি কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া চোখের জল আবেগ প্রকাশের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম, যা দমিয়ে রাখলে অবসাদ কিংবা উদ্বেগের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। তাই এমন একটি ক্লাবকে তাঁরা যুগোপযোগী উদ্যোগ হিসেবেই দেখছেন।

বর্তমানে মুম্বইয়ের এই ক্রায়িং ক্লাবে সপ্তাহে দু’বার সভার আয়োজন করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে তা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরের নানা প্রান্ত থেকে যুবক-যুবতীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

অশ্রুর পরশে প্রশান্তি খোঁজার এই নতুন ট্রেন্ড হয়তো শিগগিরই দেশের অন্য মেট্রো শহরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ, ভিড়ভাট্টার জীবনে মানুষ কোথাও গিয়ে ক্রমশ একা হয়ে পড়ছে। সেই একাকিত্বকে সামাল দিতে যদি চোখের জলই হয়ে ওঠে মুক্তির রাস্তা, তবে তাতে ক্ষতি কোথায়? শহরের ব্যস্ত রাস্তায় নিত্য নতুন কফি শপ বা জিম খোলা যতটা স্বাভাবিক, তেমনই একদিন হয়তো ক্রায়িং ক্লাবও হয়ে উঠবে সাধারণ জীবনের অংশ। আপাতত মুম্বইবাসী শিখছেন, কান্না দুর্বলতা নয়, বরং শক্তি, যা মানুষকে আবারও বাঁচার জন্য উজ্জীবিত করে।