বাজারে প্রতিনিয়ত আসছে নিত্যনতুন সাবান, শ্যাম্পু থেকে বডি লোশন। হরেক কোম্পানির আধুনিক উপাদানে তৈরি সেই সব প্রোডাক্ট নিয়ে রয়েছে ভূরি ভূরি বিজ্ঞাপনও। যা দেখে ত্বক-চুলের যত্নে সাধারণ মানুষও দেদার কিনছেন নানা পণ্য। আট থেকে আশির ব্যবহৃত সেই সাবান, শ্যাম্পু কিংবা লোশনে নাকি লুকিয়ে রয়েছে ক্যানসারের বিষ। যা দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে আপনি! হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছে। মনে বিস্ময় জাগলেও বাস্তবেই এমনই প্রমাণ মিলেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য।   


সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মহিলারা ব্যবহার করেন এমন জনপ্রিয় শ্যাম্পু, লোশন এবং সাবানে কার্সিনোজেনিক রাসায়নিক যেমন ফর্মালডিহাইড মুক্তকারী প্রিজারভেটিভ, প্যারাবেন এবং কিছু কৃত্রিম সুগন্ধি শনাক্ত করা হয়েছে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে এনভরমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজি লেটারস জার্নালে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ৭০ জন মহিলাকে নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের নিয়মিত ব্যবহার করা শ্যাম্পু, লোশন, সাবান, ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসের লেবেলের ছবি একটি অ্যাপের মাধ্যমে জমা দেন। 

আরও পড়ুনঃ শুধু বুকে ব্যথা নয়, স্ট্রোকের আগে গোপন সংকেত দেয় শরীর! এই সব লক্ষণ অবহেলা করলেই বাড়বে মৃত্যুর ঝুঁকি

এরপরই বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় ৫৩ শতাংশ মহিলা অন্তত একটি পণ্য ব্যবহার করেন যাতে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান ফরমালডিহাইড রয়েছে। এর মধ্যে অনেক পণ্যই সপ্তাহে একাধিকবার বা প্রতিদিন ব্যবহৃত হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই পদার্থগুলি ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট, ডিএনএ-এর ক্ষতি এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিত্য প্রয়োজনীয় ওই শ্যাম্পু, সাবানের মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি)-এর মানুষের শরীরে ক্যানসারের বিষ ছড়াতে পরিচিত ফর্মালডিহাইড এবং 1,4-ডাইঅক্সেন। 


বিশেষভাবে চিহ্নিত রাসায়নিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ডিএমডিএম হাইড্যানটইন। এটি প্রায় ৫৮% চুলের ও ৫৩% ত্বকের প্রসাধনীতে পাওয়া গেছে। এই উপাদানটি মূলত পণ্যের মেয়াদ বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি থেকে বার হওয়া ফরমালডিহাইড শরীরে জমে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, শুধু এক বা দুই ধরনের পণ্যে নয়—বরং বিভিন্ন ত্বক কিংবা চুলের যত্নের প্রোডাক্টে এই ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক ছড়িয়ে রয়েছে। এই কারণে মানুষের শরীরে প্রতিনিয়ত ক্ষুদ্র পরিমাণে হলেও ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ প্রবেশ করছে বলে আশঙ্কা গবেষকদের। তাই যে কোনও প্রোডাক্ট কেনার সময় উপাদান তালিকা দেখতে, লেবেলে উপকরণ পড়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত সুগন্ধি রয়েছে এমন পণ্য এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।