মাইক্রোপ্লাস্টিক অর্থাৎ পাঁচ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিক কণাগুলি এক বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। একসময় এগুলিকে কেবল পরিবেশগত সমস্যা হিসাবে দেখা হলেও, এখন এগুলি মানুষের রক্ত, ফুসফুস, এমনকি গর্ভনালিতেও (প্লাসেন্টা) পাওয়া যাচ্ছে। আর এবার গবেষণা বলছে, এই অদৃশ্য দূষণকারীরা হয়তো আমাদের হাড়েও পৌঁছে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, কীভাবে এই সূক্ষ্ম প্লাস্টিক কণা হাড়ের গঠন, ঘনত্ব এবং পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে—ফলে অস্টিওপরোসিস বা অল্প বয়সে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, তা বুঝে ওঠার আগেই।

শরীরের অদৃশ্য অনুপ্রবেশকারীরা
“মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন খাদ্য, জল এমনকি বাতাসেও মিশে গিয়েছে। শরীরে প্রবেশ করার পর এগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ তৈরি করে, যা হাড়ের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে,” বলেন ডা. অশ্বিনী মৈচাঁদ।

এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হাড়ের গঠন ও ক্ষয়ের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়—যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চক্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এতে হাড়ের ঘনত্ব এবং খনিজ পদার্থের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
“গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে এবং ক্যালসিয়াম শোষণ প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়—দু’টিই হাড়কে মজবুত রাখার জন্য অপরিহার্য,” যোগ করেন ডা. মৈচাঁদ।

কীভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিক দুর্বল করছে হাড়
মাইক্রোপ্লাস্টিক এড়ানো প্রায় অসম্ভব। এগুলি পাওয়া যায় বোতলজাত জল, সামুদ্রিক খাবার, এমনকি ঘরের ধুলোতেও। শ্বাসের সঙ্গে বা খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে ঢোকার পর এগুলি রক্তপ্রবাহে ভেসে বিভিন্ন অঙ্গে জমা হয়।
“এগুলি অস্থিমজ্জায় জমা হতে পারে, আর তখনই হাড়ের কোষের বৃদ্ধি ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে,” সতর্ক করেন ডা. ধীরজ ভটেজা।

এই কণাগুলি শরীরে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে, ফলে শরীরের নতুন হাড় তৈরির ক্ষমতা কমে যায়। এই প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে হাড়ের গঠন দুর্বল ও ভঙ্গুর করে তোলে।

“মাইক্রোপ্লাস্টিক এমন হরমোনগুলিকেও প্রভাবিত করে, যেগুলি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-র ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। এর সঙ্গে যদি দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা পুষ্টির ঘাটতি যুক্ত হয়, তবে তা নিঃশব্দে হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে,” বলেন ডা. ভাটেজা।

কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন
গবেষণা যদিও এখনও চলছে, তবু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই প্রাথমিক ফলাফল যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
ডা. মৈচাঁদ পরামর্শ দেন, “প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার গরম করা এড়িয়ে চলুন, বোতলজাত জল কম পান করুন, এবং যতটা সম্ভব তাজা খাবার বেছে নিন।”