আজকাল ওয়েবডেস্ক: উটের চোখের জল আর সাপের বিষ, দু’টির মধ্যে যে কোনও যোগাযোগ থাকতে পারে তা কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল? কিন্তু সেই অসাধ্যই সাধন করলেন বিজ্ঞানীরা। মরুভূমির জাহাজ উটের চোখের জলের মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে সাপের বিষের প্রতিষেধক! গবেষণায় এমন ইঙ্গিতই মিলেছে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মহলে আলোড়ন তুলেছে।
সম্প্রতি ভারতের বিকানেরের ‘ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন ক্যামেল’ (উট বিষয়ক জাতীয় গবেষণা কেন্দ্র) এবং দুবাইয়ের ‘সেন্ট্রাল ভেটেরিনারি রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ যৌথভাবে এমন এক গবেষণা চালিয়েছে। সেই গবেষণায় দেখা গিয়েছে উটের চোখের জল এবং রক্তে থাকা বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি সাপের বিষকে নিরসন করতে সক্ষম।
আরও পড়ুন: ২৬৪৫ লিটার স্তন্য উৎপন্ন হয় বধূর শরীরে! 'রোজ রাতে ৩ ঘণ্টা..' বিপুল দুগ্ধ উৎপাদনের রহস্য ফাঁস করলেন নিজেই
আরও পড়ুন: ১২ জন স্ত্রী! বাচ্চা করাই নেশা! ১০২ সন্তানের বাবা হয়ে অবশেষে থামলেন ৬৮-র মুসা, কেন ক্ষান্ত দিলেন? কী বললেন এ যুগের ধৃতরাষ্ট্র?
এই গবেষণায় মূলত কাজ করা হয়েছে ‘স্কেল্ড ভাইপার’ (একিস কেরিনেটাস) নামের একটি ভয়ঙ্কর বিষধর সাপকে ঘিরে। এই সাপটির কামড়ে প্রতিবছর উপমহাদেশে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। গবেষকরা উটের শরীরে এই সাপের বিষ প্রবেশ করিয়ে দেখেছেন, তাদের শরীর থেকে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি অত্যন্ত কার্যকরভাবে সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া ক্ষুদ্র অ্যান্টিবডিগুলি ২৬টিরও বেশি প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে গবেষণায়।
গবেষকদের দাবি, উটের দেহে তৈরি হওয়া বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি আকারে অত্যন্ত ক্ষুদ্র, ফলে সেগুলি অতিসহজে কোষে প্রবেশ করতে পারে এবং বিষের অনুকে আক্রমণ করতে পারে। সাধারণ অ্যান্টিবডির তুলনায় এই ধরনের অ্যান্টিবডি অনেক বেশি তাপমাত্রাতেও কাজ করে, দিকে এটি সহজে সংরক্ষণ করা যায়। মরু অঞ্চলের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্যই উটের দেহে এমন অনন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
কী কী উপাদান থাকে উটের চোখের জলে? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন এই অশ্রুতে থাকে প্রোটিন, ল্যাক্টোফেরিন, লাইসোজাইম, এবং ইমিউনোগ্লোবুলিন-এর মতো উপাদান, যা সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত কার্যকর। গবেষণা বলছে, এই উপাদানগুলির উপস্থিতি সাপের বিষের সক্রিয় অংশকে মিসাইলের মতো আক্রমণ করে তা নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, এই গবেষণা এখনও একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মানবদেহে পরীক্ষার স্তরে এখনও পৌঁছায়নি। মানব শরীরে এই অ্যান্টিবডি কীভাবে কাজ করবে, তা জানতে আরও বিস্তৃত গবেষণা এবং সুরক্ষামূলক পরীক্ষা দরকার। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যদি এই গবেষণা সফল হয়, তাহলে তা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হবে। উল্লেখ্য ভারতে এখনও প্রতি বছর প্রায় ৫০,০০০ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান। সেখানে এমন সহজলভ্য এবং তাপ-সহনশীল প্রতিষেধক তৈরি করা গেলে বহু প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
গবেষণার সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানী ডঃ অরবিন্দ কুমার সিং জানিয়েছেন, “উটের শরীরে গঠিত অ্যান্টিবডি সহজে নষ্ট হয় না। এই ধরনের প্রতিষেধক যদি বাজারে আনা যায়, তাহলে গ্রামীণ এলাকাতেও সংরক্ষণে তেমন সমস্যা হবে না।” এখন এই অদ্ভুত চোখের জল, বাস্তব চিকিৎসাবিজ্ঞানের নয়া আশায় কতটা সফল হতে পারে সেটাই দেখার। সাপের ছোবলে মৃত্যু যদি উটের চোখের জলে বন্ধ করা যায়, তবে তা নিঃসন্দেহে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক অদ্ভুত মাইলফলক হয়ে থাকবে।
