পাকা পেঁপে খেতে ভালবাসেন অনেকেই। স্বাদ ছাড়াও পেঁপে শরীরের জন্য খুব উপকারী। কিন্তু পেঁপে কাটলেই বেশিরভাগ মানুষ তার ভিতরের কালো বীজগুলো ফেলে দেন। অনেকেই জানেন না, এই ছোট বীজগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নানা স্বাস্থ্যগুণ। তাই এবার পেঁপে খাওয়ার সময় বীজ ফেলবে দেওয়ার আগে একটু ভাবুন। কারণ এগুলোও শরীরের জন্য সমান উপকারী।

পেঁপের বীজ কি সত্যিই উপকারী?

পেঁপের বীজ প্রায়ই উপেক্ষিত হলেও এগুলো অত্যন্ত পুষ্টিকর। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিন। পাশাপাশি জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজও এতে মেলে। ডায়েটিশিয়ান ও হেলথ কোচ বিধি চাওলা জানান, পেঁপের বীজে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, বিশেষ করে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই পরের বার পেঁপের বীজ ফেলতে গেলে ভাবুন এই ছোট বীজগুলো আপনার স্বাস্থ্যের কতটা উপকার করতে পারে।

ওজন কমাতে প্রাকৃতিক সহায়ক

যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্য পেঁপের বীজ হতে পারে গোপন অস্ত্র। এই বীজে থাকা ডায়েটারি ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং পেট ফোলা কমায়। নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করার পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অপ্রয়োজনীয় খাওয়া কমে যায়। দ্য জার্নাল অব নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্য ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই পেঁপের বীজ খাদ্যতালিকায় রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে।

অন্ত্রের স্বাস্থ্যের রক্ষাকবচ

ভাল স্বাস্থ্যের জন্য অন্ত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেঁপের বীজে ‘কারপেইন’ নামে একটি সক্রিয় উপাদান থাকে, যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও অন্ত্রের কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা কমায়। শুকনো পেঁপের বীজ গুঁড়ো করে স্মুদি বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য

হৃদযন্ত্রের সুস্থতার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্ক রয়েছে। পেঁপের বীজে থাকা ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভাল কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা ওলেইক অ্যাসিড রক্তে ফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ঢাল

পেঁপের বীজে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ। জার্নাল অব ক্যানসার মেটাস্টাসিস অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পেঁপের বীজে থাকা পলিফেনল বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার থেকে শরীরকে সুরক্ষা দিতে পারে। দিনে পাঁচ-ছ’টি বীজ গুঁড়ো করে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

প্রদাহ কমাতে কার্যকর

যাঁরা আর্থ্রাইটিস, গাউট বা দীর্ঘদিনের প্রদাহজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য পেঁপের বীজ উপকারী হতে পারে। এতে রয়েছে ভিটামিন সি ও অন্যান্য প্রদাহনাশক উপাদান, যা জয়েন্টের ব্যথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে।

মহিলাদের ঋতুচক্রের সমস্যায় উপশম

পেঁপের বীজে থাকা ক্যারোটিনয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, ফলে ঋতুচক্র নিয়মিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি এর ব্যথাও কমাতে পারে বলে জানা যায়। যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবুও নিয়মিত অল্প পরিমাণে পেঁপের বীজ খেলে উপকার মিলতে পারে।

ফুড পয়েজনিংয়ের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিকার

খাবার থেকে সংক্রমণ হলে পেঁপের বীজ উপকার করতে পারে। এতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ই. কোলাই-এর মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। শুকনো পেঁপের বীজ গুঁড়ো করে প্রয়োজনে খাওয়া যেতে পারে।