আজকাল ওয়েবডেস্ক: জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উত্থান—যেমন ওপেনএআই-এর ChatGPT—দক্ষিণ এশিয়ার অফিসভিত্তিক চাকরির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। বিশ্বব্যাংকের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় মাসিক চাকরির বিজ্ঞাপনের সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একইসঙ্গে, প্রায় ৭ শতাংশ চাকরির বাজার নষ্ট করবে এআই ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির প্রসারের কারণে।


বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবসা ও পরিষেবা খাত সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছে। যদিও এআই ব্যবহারে এই খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়বে, কিন্তু কর্মসংস্থানের দিক থেকে অনেক চাকরি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ChatGPT চালুর পর থেকে ব্যবসা পরিষেবা খাতে চাকরির বিজ্ঞাপন ৩৫ শতাংশ এবং মজুরি প্রায় ৮ শতাংশ কমে গেছে। বিশেষত, প্রাথমিক স্তরের কর্মী এবং যারা কলেজ পর্যায়ের ডিগ্রি ছাড়া কাজ করেন—তাদের উপরই এআই-এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে।

আরও পড়ুন: ভাড়া করা সৈন্য নিয়েই নিরাপদ, বিশ্বের কোন কোন দেশ রয়েছে এই তালিকায়


ভারতের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
প্রতিবেদনটি আরও বলছে, ভারত আগামী অর্থবছরে (FY26) ৬.৫ শতাংশ এবং FY27-এ ৬.৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক ৫.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেশি। তবে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে “premature de-professionalisation” বা পেশাগত ক্ষেত্রের আগাম ক্ষয় সবচেয়ে প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে।


উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (TCS)-এর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে কোম্পানিটি প্রায় ১২,০০০ কর্মীকে বিদায় দিয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।


তবে বিশ্বব্যাংকের মতে, ভারতের কোম্পানিগুলি এআই থেকে বিশাল উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সুফল পেতে পারে, কারণ পরিষেবা খাত ইতিমধ্যেই প্রযুক্তিনির্ভর ও ডেটা-সমৃদ্ধ। এআই প্রযুক্তি সেই দক্ষতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।


অন্যদিকে, এআই নতুন সুযোগও তৈরি করছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে এআই-সম্পর্কিত চাকরির বিজ্ঞাপন দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে, যা মোট হোয়াইট-কলার চাকরির ৬.৫ শতাংশের সমান। বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ এই চাকরির মূল চালিকা শক্তি, পাশাপাশি পুনে ও চেন্নাইয়েও প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।


তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন চাকরির মাত্র ৫.৮ শতাংশে এআই ব্যবহারের জ্ঞান বা দক্ষতা আবশ্যক, যা দেখায় যে এআই-নির্ভর উন্নয়ন এখনও কয়েকটি শহরে সীমাবদ্ধ।


আইসিটি খাতের অবদান ও সীমাবদ্ধতা
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ভারতের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত দেশের মোট জিডিপির ৭.৫ শতাংশ অবদান রেখেছে এবং ৫.৪ মিলিয়ন চাকরি সৃষ্টি করেছে। তবে প্রতিবেদনে কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও স্বীকার করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এআই এক্সপোজার সূচক মূলত “আদর্শ পরিস্থিতি” ধরে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বাস্তব জীবনে কোম্পানিগুলি কতটা এআই ব্যবহার করবে তা অনেকাংশে স্থানীয় প্রেক্ষাপটে নির্ভরশীল।


এছাড়াও, এই গবেষণা নতুন চাকরির শ্রেণিবিভাগ বা ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে ধরতে সক্ষম নয়—যা ভবিষ্যতে এআই প্রযুক্তির কারণে তৈরি হতে পারে। যেহেতু এসব পরিমাপ মূলত উন্নত অর্থনীতির কাজের ধরন অনুসারে তৈরি, তাই উদীয়মান বাজার বা উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে এটির প্রয়োগ সীমিত হতে পারে। বিশ্বব্যাংক শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছে যে দ্রুত এআই উন্নয়নের ফলে বর্তমান পরিসংখ্যানগুলো হয়তো প্রকৃত প্রভাব ও সম্ভাব্য উৎপাদনশীলতার উন্নতি পুরোপুরি প্রতিফলিত করছে না।