আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্র কর্মী মারিয়া করিনা মাচাদোকে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু মাচাদোকে নিয়ে বিতর্ক থামছে না। সমালোচকরা জানিয়েছেন যে, নোবেলজয়ী মাচাদো ইজরায়েল এবং গাজায় বোমা হামলাকে সমর্থন করেছিলেন এবং ভেনিজুয়েলার সরকার উৎখাতের জন্য বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বানও জানিয়েছিলেন।

মাচাদো ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রকামী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই মহিলা সাহসের এক শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্রের প্রচার এবং একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মারিয়া করিনা মাচাদোর কাজের জন্য শুক্রবার নোবেল পুরস্কার কমিটি তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মাচাদোর নাম ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সরব হয়েছে হোয়াই হাইউস। বিশ্বজুড়ে অর্ধ ডজন সংঘাত বন্ধকারী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্ব শান্তিরক্ষী হিসেবে চিত্রিত না করায় হোয়াইট হাউস "শান্তিকে রাজনীতির চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার" জন্য এই ঘোষণার সমালোচনা করেছে। 

পরে মাচাদো ট্রাম্পকে তাঁর নোবেল উৎসর্গ করেন। জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আনন্দ প্রকাশ করেন। 

মাচাদো কেন নোবেল পেলেন?
নোবেল পুরষ্কার কমিটি মাচাদোকে "শান্তির রক্ষক" হিসেবে প্রশংসা করেছে, যিনি ক্রমবর্ধমান অন্ধকারের মধ্যে ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্রের শিখাকে জ্বালিয়ে রেখেছেন। কমিটির সভাপতি জর্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস তাঁকে "একসময় বিভক্ত ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক বিরোধী দলের মূল, ঐক্যবদ্ধ ব্যক্তিত্ব" বলে অভিহিত করেছেন।

নোবেল শান্তি বিজয়ী দেখিয়েছেন যে, গণতন্ত্রের হাতিয়ারও শান্তির হাতিয়ার। একটি ভিন্ন ভবিষ্যতের আশা মূর্ত করার জন্য কমিটি মাচাদোর প্রশংসা করেছে। মাচাদোর আন্দোলন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করা এবং তাঁদের কণ্ঠস্বর রোধের বিরুদ্ধে।

নোবেল কমিটির সভাপতি ফ্রাইডনেস তাঁর ঘোষণায় বলেছেন "বছরভর, মাচাদোকে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও, তিনি দেশেই থেকে গিয়েছেন, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। যখন কর্তৃত্ববাদীরা ক্ষমতা দখল করে, তখন স্বাধীনতার সাহসী রক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।" 

মাচাদোর বিরুদ্ধে সমালোচনা
সমালোচকরা গাজায় "গণহত্যা" সমর্থন করার জন্য মাচাদোর পুরনো পোস্টগুলি শেয়ার করেছেন। মাচাদোর পদক্ষেপ ইজরায়েল এবং বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ দলের প্রতি সমর্থনের প্রকাশ বলে অভিযোগ।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলার পর মাচাদো ইজরায়েলের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করলেও, তিনি কখনও গোপনে প্যাসলেস্তানীয়দের হত্যার প্রতি সমর্থন জানাননি।

কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তাঁর পোস্টগুলি নিশ্চিত করেছে যে, তিনি নেতানিয়াহুর একজন মিত্র। তাঁর সমালোচকদের তুলে ধরা পোস্টগুলির মধ্যে অন্যতম হল "ভেনিজুয়েলার সংগ্রাম ইজরায়েলের সংগ্রাম।" দুই বছর পরে, মাচাদো ইজরায়েলকে "স্বাধীনতার প্রকৃত মিত্র" বলে অভিহিত করেছিলেন। মাচাদো ক্ষমতায় এলে ভেনেজুয়েলার দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করারও প্রতিশ্রুতি  দিয়েছিলেন।

নরওয়ের আইনপ্রণেতা বজর্নার মক্সনেস উল্লেখ করেছেন যে, মাচাদো ২০২০ সালে ইজরায়েলের লিকুদ দলের সঙ্গে একটি সহযোগিতার দলিল স্বাক্ষর করেছিলেন। লিকুদ দল "গাজা গণহত্যার" জন্য দায়ী এবং তাই এই পুরস্কার নোবেলের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মুসলিম নাগরিক অধিকার সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস মাচাদোকে নোবেল সম্মান প্রদানের সিদ্ধান্তকে "অবিবেচনাপ্রসূত" বলে নিন্দা করেছে। নোবেল কমিটির উচিত তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা কারণ বিজয়ীর নাম তাদের সুনামকে ক্ষুণ্ন করে।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস-এর তরফে একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, "নোবেল শান্তি পুরষ্কার কমিটির উচিত এমন একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া যিনি সাহসিকতার সঙ্গে সকল মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে নৈতিক ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন, যেমন একজন ছাত্র, সাংবাদিক, কর্মী, চিকিৎক। গাজায় গণহত্যার বিরোধিতা করার জন্য তাঁদের ক্যারিয়ার এমনকী তাঁদের জীবনের ঝুঁকিও নিয়েছেন।" 

বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান
ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোর শাসনের উপড়ে ফেলতে মাচাদো বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন বলেও অভিযোগ। ২০১৮ সালে, তিনি তাঁর দেশে শাসন পরিবর্তনের জন্য ইজরায়েল এবং আর্জেন্টিনার সমর্থন চেয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন।

তিনি অনলাইনে চিঠির একটি অনুলিপি শেয়ার করে বলেছিলেন, "আজ, আমি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু-কে একটি চিঠি পাঠাচ্ছি, যাতে তাঁরা ভেনেজুয়েলার মাদক পাচার এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত অপরাধী শাসনব্যবস্থা ভেঙে ফেলার জন্য তাঁদের শক্তি এবং প্রভাব প্রয়োগ করতে পারেন। যা ।"