আজকাল ওয়েবডেস্ক: কয়েক দশক ধরে, মহাকাশ বিজ্ঞানপ্রেমীদের কাছে সবসময়ই একটি আকর্ষণীয় বিষয়। গ্রহ, নক্ষত্র, কৃষ্ণগহ্বর এবং ছায়াপথ সম্পর্কে এমন অনেক তথ্য রয়েছে যা প্রায়শই আমাদের আকর্ষণ করে। মহাকাশ ভ্রমণ সর্বদা মানবজাতির জন্য অ্যাডভেঞ্চার এবং বিস্ময়ের উৎস। সদ্য ভারতীয় বায়ুসেনার সদস্য শুভাংশু শুক্লা মহাকাশ থেকে ঘুরে এসেছেন। ফলে মহাকাশ নিয়ে আগ্রহ আরও বেড়েছে। স্পেশ স্টেশনে মহাকাশচারীদের নানা কর্মকাণ্ড, খাওয়া-দাওয়া, জীবনযাত্রা মানুষকে মহাকাশ নিয়ে আরও কৌতুহলী করেছে। কখনও ভেবে দেখেছেন, মহাকাশে কোনও নভশ্চরকে প্রথম কোন খাবার দেওয়া হয়? প্রথম খাবারের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? 

১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন ভোস্টক ১ মহাকাশযানে পৃথিবীর কক্ষপথে পা রাখেন। মাত্র ১০৮ মিনিটের সেই ভ্রমণ ইতিহাসে প্রথম মানব মহাকাশযাত্রা হিসেবে পরিচিত। এই যাত্রাতেই মানুষ প্রথমবারের মত মহাকাশে খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল। নাসা জানিয়েছে, মহাকাশে একটি অ্যালুমিনিয়াম টিউব থেকে গরুর মাংস এবং লিভারের পেস্ট মুখে চেপে ধরেছিলেন ইউরি এ. গ্যাগারিন। 

প্রথম মহাকাশচারী
১৯৬১ সালে, সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে ভ্রমণকারী প্রথম মানুষ ছিলেন। এবিপি লাইভের রিপোর্ট অনুসারে, ভোস্টক  ১-এ ইউরি গ্যাগারিনের অভিযান ছিল ১০৮ মিনিট দীর্ঘ। স্পেশ ডট কম-এর মতে, ১৯৬১ সালে ভোস্টক ১ মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সময় ইউরি মহাকাশে প্রথম মানুষ ছিলেন। এই সংক্ষিপ্ত যাত্রার সময়, তিনি ইতিহাস তৈরি করেছিলেন এবং প্রথম নভশ্চর হিসাবে তিনিই মহাকাশে প্রথমবার খাবার খেয়েছিলেন। 

কীভাবে খাবার খেয়েছিলেন?
শূন্য মাধ্যাকর্ষণে সাধারণ খাবার টুকরো হয়ে ভেসে যেতে পারে এবং শ্বাসনালীতে ঢুকে বিপদ ঘটাতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা খাবারকে বিশেষভাবে তৈরি করেছিলেন। ইউরি গ্যাগারিনের জন্য দুটি টিউব প্যাকেট দেওয়া হয়েছিল, একটি টিউবে ছিল গরুর মাংস ও লিভারের পেস্ট। আরেকটি টিউবে ছিল চকোলেট সস। এই টিউবগুলো অনেকটা টুথপেস্ট টিউবের মত ছিল, যেখানে চাপ দিয়ে সরাসরি মুখে খাবার নিতে হত।

সেই সময়ে, বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল শূন্য মাধ্যাকর্ষণে কীভাবে খাওয়া যায় তা জানা। শূন্য মাধ্যাকর্ষণে খাবার খাওয়ার সময় বড় সমস্যা ছিল ফুড পার্টিকলস ভেসে যাওয়া। যদি খাবারের টুকরো ভেসে গিয়ে মেশিনে ঢুকে পড়ে বা মহাকাশচারীর নাকে-মুখে চলে যায় তবে তা প্রাণঘাতী হতে পারত। তাই খাবারকে তরল বা পেস্ট আকারে মহাকাশে রাখা হত। ইউরি গ্যাগারিন জানিয়েছিলেন যে খাবারের স্বাদ একদম স্বাভাবিক ছিল। খাওয়ার সময় কোনও বিশেষ অসুবিধা হয়নি। তবে খাওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মুখে চাপ দিয়ে টিউব থেকে খাবার বের করে খেতে হয়েছিল।

তবে এই অভিযান সফল বলে বিবেচিত হয়। কারণ,এই মহাকাশ যাত্রাই প্রমাণ করেছিল যে- মানুষ মহাকাশে খাবার খেতে পারে। যা মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাকাশে খাবার খাওয়ার ধরন ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে। আজকের দিনে মহাকাশচারীরা শুধু পেস্ট জাতীয় খাবার নয়, বরং ফ্রিজে শুকানো খাবার, ফল, বাদাম, রুটি, এমনকী পিৎজা এবং আইসক্রিম পর্যন্ত খেতে পারেন। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে এখন মহাকাশের খাবার অনেক বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন- প্রতি ২৬ সেকেন্ড অন্তর কাঁপছে পৃথিবী, ঘটতে পারে বড় অঘটন